শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের ভাতিজাকে কুপিয়ে জখম

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের মুলাদী উপজেলা শহরে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের ভাইয়ের ছেলে নুরুল হুদা ওরফে পাপ্পুকে (৫৪) হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

মুলাদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রাঢ়ির সমর্থকেরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ হামলা চালিয়েছেন বলে নুরুল হুদার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। নুরুল হুদাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে।

দলে নুরুল হুদার কোনো পদ-পদবি না থাকলেও তিনি মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান খানের ঘনিষ্ঠ বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মুলাদী শহরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, নুরুল হুদার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর হাতে-পায়ে গুরুতর জখম রয়েছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান বলেন, আহত নুরুল হুদা শহীদ আলতাফ মাহমুদের ছোট ভাই শাহজাহান মাহমুদের ছেলে। মুলাদী থানার পাশে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসা থেকে হাসপাতাল রোডে যান নুরুল হুদা। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রাঢ়ির সন্ত্রাসী বাহিনী সেখানে তাঁর ওপর হামলা করে। এ সময় হাতুড়িপেটা করে দুই হাত ও এক পা থেঁতলে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে কুপিয়ে মুলাদী সরকারি কলেজের পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তারিকুল হাসান খানের সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে সুমন রাঢ়ির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় সুমন রাঢ়ির সমর্থকেরাও পাল্টা হামলার চেষ্টা চালালে ঘণ্টাখানেক পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

আহত নুরুল হুদার স্ত্রী শিমু বেগম বলেন, হামলার সময় নুরুল হুদা চিৎকার দিলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। এ সময় নুরুল হুদা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সন্ত্রাসীরা তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তাঁকে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল পাঠানো হয়।

হামলার কারণ জানতে চাইলে শিমু বেগম বলেন, তাঁর স্বামী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে লঞ্চে করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। মুলাদী নবাবেরঘাট থেকে ২৪ জুলাই বিকেলে লঞ্চে ওঠার সময় সুমন রাঢ়ির সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছে।

ঘটনার সময় বরিশালে অবস্থান করছিলেন জানিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রাঢ়ি শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় লঞ্চে উঠতে গেলে আমাদের কয়েকজন নেতাকে মারধর করেন নুরুল হুদা। এর জের ধরে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। অবশ্য ওই সময় আমি মুলাদীতে ছিলাম না। এরপরও আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়।’

এ ঘটনায় শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি বলে জানিয়েছেন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মাকসুদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেউ আটক নেই। মুলাদী শহরের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।