শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ পাহাড়ে কেন রক্তপাত হবে, প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে এপিবিএনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটি শহরের সুখী নীলগঞ্জ পুলিশ লাইনস মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পাহাড়ি অঞ্চল সম্ভাবনাময়। এত সুন্দর মানুষের মন, এত শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ, এখনো কেন রক্তপাত হবে, এখানে কেন চাঁদাবাজি হবে?

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাঙামাটি শহরের সুখী নীলগঞ্জ পুলিশ লাইনস মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি ডিআইজি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (তিন পার্বত্য জেলা) ও তিন জেলায় তিনটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত, হানাহানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হচ্ছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করে, সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কবরে এপিবিএন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে অনেক সমস্যা রয়েছে, সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে শেষ করব। এই আশ্বাস দিয়ে চলা শুরু করলাম।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পাহাড়ে সব শ্রেণির মানুষ শান্তি চায়, আমরাও চাই। তাই যেকোনো মূল্যে চাঁদাবাজি ও রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। এখন শুনছি বাঙালি ভাইরাও নাকি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যদি যুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদের চরম বিপর্যয় চলে আসবে। এখানে শান্তি–শৃঙ্খলার স্বার্থে যা করা দরকার, তা করব। যারা রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি করছে, তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেখিয়ে দেব, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামও পিছিয়ে নেই। যেখানে সারা দেশে শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে মাত্র ২৩ শতাংশ। এটা হতে পারে না। এটা চলতে পারে না, সবাই সমান।’

জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন। এতে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন, চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।

এদিকে গতকাল বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে বিশেষ সভা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাত পৌনে আটটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে এতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে দেড় ঘণ্টাব্যাপী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমার বৈঠক হয়। এতে তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা ও পার্বত্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বিশেষ সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেন শান্তি ফিরে আসে, সে জন্য সরকার কাজ করছে। সন্তু লারমার সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি ও ভূমি কমিশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব কটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হবে।