‘শান্তিভঙ্গের’ অভিযোগে কৃষকের বিরুদ্ধে এক মাসে তিন জেলায় তিন মামলা

নাটোর জেলার মানচিত্র

নাটোরের সিংড়ায় এক কৃষক পরিবারের বিরুদ্ধে ‘শান্তিভঙ্গের’ অভিযোগে এক মাসের মধ্যে তিন জেলায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। হয়রানি করে জমি হাতিয়ে নিতেই এসব মামলা সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই কৃষক। এদিকে মামলা বাদীপক্ষের অভিযোগ, ওই কৃষক নানাভাবে খুন–জখমের হুমকি দিয়ে শান্তিভঙ্গ করছেন।

ওই কৃষকের নাম জিল্লুর রহমান (৬২)। তিনি উপজেলার ছাতারদীঘি ইউনিয়নের করচমারিয়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে। এদিকে জিল্লুর রহমান ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে একই গ্রামের বিদ্যুৎ শাহ ওরফে জামিল উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর দুটি ও রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা নুরুন নবী খোন্দকার একটি মামলা করেছেন।

জিল্লুর জানান, ২০১০ সালে তাঁর বাবা ও তিনি বাদী হয়ে নাটোরের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে সম্পত্তি বণ্টনের মামলা করেন। এরপর চলতি বছরের ১৮ মার্চ আদালতের নির্দেশে তাঁরা ছাতারদিঘী মৌজার ৪৭ শতক জমির দখল নেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার বিবাদী, অর্থাৎ, বিদ্যুৎ শাহ ওরফে জামিল উদ্দিন ও তাঁর লোকজন ওই জমিতে গিয়ে তাঁদের একটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেন এবং জমিতে থাকা শতাধিক চারাগাছ কেটে ফেলেন।

অগ্নিসংযোগ ও গাছ কেটে ফেলার ঘটনার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর জিল্লুর বাদী হয়ে বিদ্যুৎ শাহসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সিংড়া আমলি আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ শাহের ছেলে আবু বক্কর বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘শান্তিভঙ্গের’ অভিযোগে জিল্লুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের কদমতলী পাকা রাস্তার ওপর প্রতিপক্ষরা (জিল্লুর ও তাঁর লোকজন) তাঁর শান্তিভঙ্গের চেষ্টা করেছে। এরপর ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারায় জিল্লুরকে সশরীর হাজির হয়ে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেন আদালত। ৯ নভেম্বর জিল্লুর আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শালে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর আবু বক্কর একই ধরনের অভিযোগে জিল্লুর, তাঁর ছেলে, চাচাতো ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও একটি মামলা করেছিলেন। ৬ ডিসেম্বর জিল্লুরসহ মামলার অন্য আসামিদের মানিকগঞ্জের আদালতে হাজির হতে হবে। এই মামলার পরদিন ২৫ অক্টোবর রাজশাহীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জিল্লুরসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই মামলা করা হয়। এ মামলার বাদী রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা নুরুন নবী খোন্দকার। এ মামলায় ৫ ডিসেম্বর জিল্লুরসহ অন্য আসামিদের আদালতে সশরীর হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে হবে। নুরুন নবী খোন্দকার আবার জিল্লুরের করা মামলার ৮ নম্বর আসামি।

ওই মামলার বিষয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় হওয়া মামলাগুলো সম্পূর্ণ অসত্য ও কাল্পনিক। আমাদের জমি হাতিয়ে নিতে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য প্রতিপক্ষ মামলাবাজির কৌশল নিয়েছেন। দেশের দূর–দূরান্তের জেলায় গিয়ে গিয়ে আমরা কীভাবে শান্তিভঙ্গ করছি, তা ধারণাও করতে পারছি না। মিথ্যা পরিচয়ে সাজানো কাল্পনিক কাহিনি দিয়ে এসব মামলা হচ্ছে। তদন্ত না হয়ে সরাসরি আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ থাকায় আমরা বিভিন্ন জেলায় দৌড়াদৌড়ি করছি। আমরা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালত ও আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।’

এক মামলার বাদী নুরুন নবী খোন্দকার অভিযোগ করে বলেন, জমি নিয়ে জিল্লুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ আছে। বিরোধের জেরে জিল্লুর রহমান ও তাঁর লোকজন তাঁকে খুন–জখমের ভয় দেখিয়ে শান্তিভঙ্গ করেছে। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন।

এদিকে অন্য দুই মামলার বাদী আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর বাবা বিদ্যুৎ শাহ বলেন, তাঁর ছেলে আবু বক্কর হাইকোর্টের মুহুরি। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। মামলার প্রয়োজনে তিনি নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ গেলে জিল্লুর রহমান গং তাঁকে খুন ও জখমের হুমকি দিয়েছেন। এ কারণে তাঁর ছেলে মামলা করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী লোকমান হোসেন বলেন, বাদী ও বিবাদীর উভয়ের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। বিরোধপূর্ণ জমিও নাটোর জেলায়। অথচ মামলা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাঁর ধারণা, আদালতকে ভুল বুঝিয়ে এসব মামলা করা হচ্ছে।