শাল্লার হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, পৌর শহর, সুনামগঞ্জ, ৩১ মার্চ
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা পরিকল্পিত। এ ঘটনায় থানায় যে মামলা হয়েছে সেটি হালকা ধারায় নথিভুক্ত হয়েছে। তাই মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে গ্রহণ, সব আসামির দ্রুত গ্রেপ্তার ও অভিযোগপত্র দিতে হবে।

এ ছাড়া ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের উপায় বের করতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাল্লা সোচ্চার নাগরিক ফোরাম (সোচ্চার) সিলেট-এর পক্ষ থেকে বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য আইনজীবী সুব্রত দাশ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নোয়াগাঁওয়ের ঘটনা এ অঞ্চলের হাজার বছরের বিশ্বাস, সম্প্রীতির বন্ধন ও নির্ভরতায় আঘাত করা হয়েছে। হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং প্রশাসন এই ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিরোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঘটনার পর নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন, সেটির বিষয়বস্তু ও গুরুত্ব বিবেচনায় এজাহারটি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২–এর আওতায় নথিভুক্ত করা সমীচীন। কিন্তু পুলিশ সেটি করেনি। পুলিশ অপেক্ষাকৃত হালকা ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে রেকর্ড করা এবং দ্রুত অভিযোগপত্র দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের হামলা নতুন নয়। এর আগে চট্টগ্রামের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং নোয়াগাঁও গ্রামের হামলা একই সূত্রে গাঁথা। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও লুটপাটের মাধ্যমে তাদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে সম্পত্তি দখল ও দেশছাড়া করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। নোয়াগাঁওয়ের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের দ্বারা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলা হয়, যাতে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যায় এবং এ ধরনের কারণ, লক্ষ্য, গতি-প্রকৃতি অনুসন্ধান ও চিহ্নিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্ম প্রতিরোধের উপায় বের করা সম্ভব হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অর্জুন কুমার চক্রবর্তী, সদস্য জ্যোতিষ মজুমদার, দীলিপ কুমার দাস, প্রদ্যুৎ কান্তি মজুমদার ও ওমর চক্রবর্তী।

নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ঝুমন দাশ আপনের (২৮) বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৭ মার্চ সকালে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডিপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ লাটিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশে গিয়ে অবৃস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে হামলা চালান। এর আগে ১৫ মার্চ দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দিয়ে যান।

হামলার ঘটনার আগের রাতে গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন দাশ কারাগারে আছেন। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।