শাল্লায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২

শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন দিরাই উপজেলার ধনুপুর গ্রামের হান্নান মিয়া (৫০) ও চণ্ডীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম। আজ সোমবার দুপুরে নিজ নিজ গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। হান্নান মিয়া স্থানীয় সরমঙ্গল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার জানান, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে গত ১৭ মার্চ সকালে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের মানুষ প্রথমে লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন নদের তীরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক ওই গ্রামে দিয়ে হামলা চালান। এ সময় বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হবে।
ইকবাল বাহার, সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি

শাল্লায় হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানা ও আদালতে মামলা হয়েছে চারটি। শাল্লা থানায় গত ১৮ মার্চ দুটি এবং ২২ মার্চ একটি মামলা হয়। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল আদালতে আরেকটি মামলা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত নাসনি গ্রামের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা শহিদুর ইসলাম ওরফে স্বাধীনসহ ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নোয়াগাঁওয়ে ঘটনায় ১৮ মার্চ করা দুটি মামলার একটির বাদী শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৪০০ জন থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। অন্য মামলাটি করেন নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার। এই মামলায় ৫০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। আর ২২ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে থানায় আরেকটি মামলা করেন শাল্লা থানার এসআই আবদুল করিম।

এই ঝুমন দাশের ফেসবুক পোস্ট নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। তিনি ১৭ মার্চ থেকে কারাগারে। ১ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন ঝুমন দাশের মা নিভা রানী দাশ। এই মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে ৭২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে আরও দুই হাজার। এর মধ্যে ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা গ্রেপ্তার হওয়া নাসনি গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীনকে এই মামলায়ও ১ নম্বর আসামি করা হয়।

শাল্লায় হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গত ৭ এপ্রিল শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁকে শাল্লা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় দিরাই থানার ওসি মো. আশরাফুল ইসলামকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়।