শাল্লায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলায় ইউপি সদস্য শহিদুল গ্রেপ্তার

সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যলঘুদের বাড়িতে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মিয়াকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল শুক্রবার রাত তিনটার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা শহর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে একটি স্কুলের পাশে তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান গ্রেপ্তারের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় শহিদুল ইসলামের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সুনামগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের নাসনি গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের এক যুবক আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছেন—এমন অভিযোগ তুলে গত বুধবার সকালে পাশের চার গ্রামের লোকজন নোয়াগাঁওয়ে গিয়ে হামলা চালান। এ সময় গ্রামের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী শহিদুল ইসলাম বলে অভিযোগ নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর। গ্রামের পাশের একটি জলমহাল দিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে শহিদুল ইসলামের বিরোধ ছিল। এই সুযোগ তিনি কাজে লাগিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বরং তিনি শুরু থেকে এ রকম ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই চেষ্টায় ছিলেন। এখন তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে বলে তাঁর দাবি।

নোয়াগাঁও গ্রামের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাল্লা থানায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলা করে শাল্লা থানার পুলিশ। থানার উপপরিদর্শক আবদুল করিম বাদী হয়ে দায়ের করা ওই মামলায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করেন নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার। ওই মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে আসামি করা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম ওই মামলার ১ নম্বর আসামি। এর আগে পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিরাই উপজেলা শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক বক্তব্য দেন। পরে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস (২৮) আপত্তিকর পোস্ট দেন অভিযোগ তুলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজন ঝুমনকে পুলিশে দেন। এর জেরে পরের দিন বুধবার সকালে আশপাশের শাল্লা উপজেলার কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডিপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে বসতবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালান।