শাহরাস্তিতে চুরি করতে ঢুকে দম্পতিকে খুন করেন রিকশাচালক: পিবিআই

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে খুনের শিকার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার
ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল আমিন (৭০) ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহারকে (৫৯) হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই বলছে, পরিচিত এক রিকশাচালক চুরি করার জন্য বাড়িতে ঢুকে ওই দম্পতিকে খুন করেন। চুরি করা মুঠোফোনের সূত্র ধরেই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শাহরাস্তি উপজেলার ঘুঘুসাল এলাকার মো. আবদুল মালেক, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান এলাকার মো. ইলিয়াস হোসেন ও বরিশাল জেলার কাউনিয়া উপজেলার চরবাড়ীয়া এলাকার মো. বশির। তাঁদের মধ্যে মালেক সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচার সূত্র ধরে ইলিয়াস ও বশিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজন চাঁদপুর শহরে বসবাস করতেন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পিবিআই চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভীন। গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পিবিআই জানিয়েছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি থেকে ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরদিন চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হন বশির। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালে কুমিল্লার লাকসাম থেকে মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রেজওয়ানা পারভীন বলেন, নুরুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার দুজনই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময় তাঁরা ব্যাংকে যাতায়াত করতেন। তাঁদের নিজের রিকশায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন তাঁদের দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশী রিকশাচালক আবদুল মালেক। ঘন ঘন ব্যাংকে যাতায়াত করায় অনেক আগে থেকেই ছোটখাটো চুরির সঙ্গে জড়িত মালেক ফন্দি আটেন ওই দম্পতির ঘরে চুরি করার।

১ জুলাই ছাদ থেকে মৃত অবস্থায় নুরুল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অচেতন অবস্থায় কামরুন নাহারকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির মূল ফটক খোলা পেয়ে মালেক বাড়ির ছাদে অবস্থান নেন। রাত নয়টার দিকে নুরুল আমিন ছাদে উঠলে মালেক নিজের সঙ্গে থাকা রড দিয়ে পেছন থেকে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ছাদে শুকাতে দেওয়া পায়ের মোজা দিয়ে শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করেন মালেক।

পরবর্তী সময় চুরি করতে ভবনের একটি কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে একটি ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ার টানাটানি করতে থাকেন। শব্দ শুনতে পেয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে মালেককে দেখে চিনে ফেলেন কামরুন্নাহার। ফলে মালেক তাঁর হাতে থাকা রড দিয়ে কামরুন্নাহারের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি ফ্লোরে পড়ে যান এবং তাঁর মাথা বেয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর নুরুল আমিনের ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন ও নিহত কামরুন্নাহারের কানের দুল এবং হাতের একটি আংটি নিয়ে ছাদ থেকে গাছ বেয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যান তিনি।

এ ঘটনার দুই দিন পর ১ জুলাই ছাদ থেকে মৃত অবস্থায় নুরুল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অচেতন অবস্থায় কামরুন নাহারকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জুলাই তিনিও মারা যান। এ ঘটনায় নিহত দম্পতির ছেলে মো. জাকারিয়া বাবু বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।