শিকলে বন্দী কালামের জীবন

মানসিক ভারসাম্যহীন কালামকে সুপারি গাছের সঙ্গে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পাকা সড়ক ঘেঁষে সেচ প্রকল্পের নালা। তা ঘেঁষে সারি সারি সুপারিগাছ। ওই সুপারিগাছ ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই আবু কালামের (৩৫) সারা দিনের সঙ্গী। সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত কালামকে সেখানেই শুয়ে-বসে থাকতে হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে কালামের এই বন্দিজীবন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খড়িবাড়ী থেকে পাটিয়াডাঙ্গী বাজার যাওয়ার পথে দেখা মেলে তাঁর। ওই সড়কের উত্তর বঠিনা গ্রামে কালামদের বাড়ি।

গতকাল রোববার দুপুরে দেখা যায়, সুপারিগাছে হেলান দিয়ে কালাম বসে আছেন। হঠাৎ দাঁড়িয়ে সুপারিগাছের পাতা ছিঁড়ে মুখে দিয়ে চাবাতে শুরু করলেন তিনি। পাতা চাবাতে চাবাতে সিমেন্টের বস্তার তৈরি মাদুরে শুয়ে পড়লেন। বেলা একটার দিকে কালামের মা কুলসুম বেগম পানির মগ নিয়ে এলেন। কালাম ঢকঢক করে মগের পানিটুকু গিলে ফেললেন।

সে সময় কুলসুম বেগম বলেন, কালাম ঢাকায় কাজ করতেন। সেখানে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের তিন ছেলে–মেয়ে। ভালোই ছিলেন কালাম। তিন বছর আগে মানসিক সমস্যা দেখা দিলে বউ–সন্তান নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান কালাম। এরপর কালাম আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা বলেন, সুযোগ পেলে কালাম দূরে চলে যান। এলাকার বাড়িঘরে গিয়ে মানুষজনকে মারধর করেন। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে স্বজনেরা কালামকে শিকলে বেঁধে রাখতে শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে মা বলেন, ‘কখন কালাম হারায় যায়, গাড়ির নিচে পড়ে, সেই চিন্তা হয়। তাই মা হয়ে নিজেই ছেলের পায়ে শিকল দিছি।’

কালামের বাবা আবদুল গণি বলেন, ‘গরিবের সংসার। রংপুরসহ এলাকার কত ডাক্তারের কাছে ছেলের চিকিৎসা করালাম। কোনো উন্নতি নাই। প্রত্যেক মাসে ওষুধ লাগে তিন হাজার টাকার ওপরে। এই টাকাও জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম বলেন, একজন যুবককে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে, এটা দেখতেই খারাপ লাগে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য সব রকমের সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।