শিকলে বাঁধা জীবন

মেয়েকে শিকলে বেঁধে নিয়ে ভিক্ষা করেন মা হালিমা বেগম
ছবি: প্রথম আলো

স্বামী শয্যাশায়ী। ১০ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। কথাও বলতে পারে না। চোখের আড়াল হলেই অন্যদিকে চলে যায়। বাধ্য হয়ে মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে ভিক্ষা করেন মা হালিমা বেগম (৪০)।

হালিমা বেগমের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে। স্বামী আলম মোল্লা একসময় দিনমজুর ছিলেন। এখন অসুস্থ হয়ে কর্মহীন। দৃষ্টিশক্তিও হারাতে বসেছেন। হালিমা বেগমও নানা অসুখে ভুগছেন। ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি।

গতকাল বুধবার দুপুরে মেয়েকে নিয়ে পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন দোকানে সাহায্যের আকুতি জানাতে দেখা গেল হালিমা বেগমকে। মেয়ের হাতে শিকল পেঁচিয়ে তালাবদ্ধ করা। শিকলের অপর প্রান্ত হালিমা বেগমের হাতে। মেয়েকে শিকলে বেঁধে রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হালিমা বেগম বলেন, তাঁর মেয়ে শারমিন একবার হারিয়ে যায়। প্রায় দুই মাস পর চাঁদপুরে খুঁজে পান। এরপর থেকে নিরুপায় হয়ে মেয়েকে শিকলে বেঁধে রাখেন।

অভাব-অনটনের জীবন হালিমাদের। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েই চলে তাঁদের সংসার। প্রতিদিনই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়। সারা দিন মানুষের কাছে হাত পেতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পান। সেই টাকা দিয়েই স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে জীবন পার করছেন।

আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেরাজুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি দরিদ্র ও অসহায়। আলম মোল্লা ও তাঁর মেয়ে শারমিন দুজনই প্রতিবন্ধী। বাবা-মেয়ের নামে প্রতিবন্ধী কার্ড করা হয়েছে, দুজনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এখন তাঁরা কাশিপুর এলাকায় একটি দোকানের পেছনে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বিভিন্ন এলাকায় সারা দিন ভিক্ষা করার পর সন্ধ্যায় এলাকায় চলে আসেন হালিমা বেগম।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল হক ফকির বলেন, হালিমা সারা দিন এলাকায় না থাকায় বিষয়টি তিনি জানতেন না। পরিবারটির জন্য একটি ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।