শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, অডিও ভাইরাল

বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন সাবেক এক শিক্ষার্থী। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় তাঁকে ফোন করে হুমকি দেন ওই শিক্ষক। ওই ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার (ভাইরাল) পর তোলপাড় শুরু হয়েছে।

‘বাজে ইঙ্গিত’ করে মেয়েটিকে দেখা করতে বলেন শিক্ষক। কুমতলব আছে, ভেবে তিনি দেখা করেননি। সম্প্রতি ফেসবুকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠান। মেয়েটি তা গ্রহণ করেন। ২১ আগস্ট রাতে শিক্ষক মেসেঞ্জারে মেয়েটিকে অশ্লীল প্রস্তাব দেন। অশ্লীল ছবি পাঠাতে বলেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। আর মেয়েটি বর্তমানে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তিনি বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি এবং ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসির প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষার সময় হলে গিয়ে ‘বাজে ইঙ্গিত’ করে মেয়েটিকে দেখা করতে বলেন শিক্ষক। কুমতলব আছে, ভেবে তিনি দেখা করেননি। সম্প্রতি ওই শিক্ষক মেয়েটিকে ফেসবুকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠান। মেয়েটি তা গ্রহণ করেন। ২১ আগস্ট রাতে শিক্ষক ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেয়েটিকে অশ্লীল প্রস্তাব দেন। অশ্লীল ছবি পাঠাতে বলেন।

ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য কোনো ছাত্রীর সঙ্গে যাতে এসব করতে না পারে, সে জন্য আমি ওই লেখার স্ক্রিনশট ফেসবুকে দিই। এরপর তিনি ফোন করে আমাকে হুমকি দেন। আমার অশ্লীল ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানোর হুমকি দেন। বাড়াবাড়ি করলে আমার ক্ষতি হবে বলেও শাসিয়ে দেন।’

মেসেঞ্জারে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টিও সত্য। তবে মুঠোফোনের অডিওটার ‘মিস ইউজ’ হয়েছে
অভিযোগ ওঠা প্রভাষক, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, বগুড়া

এদিকে ওই স্ক্রিনশট ও শিক্ষকের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অডিওটি প্রথম আলোর হাতে এসেছে।
ইংরেজি বিভাগের ওই প্রভাষক মেসেঞ্জারে সাবেক ছাত্রীকে অশ্লীল প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেননি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ফেসবুক আইডিটা তাঁর নিজের। মেসেঞ্জারে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টিও সত্য। তবে মুঠোফোনের অডিওটার ‘মিস ইউজ’ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে এখন আর কিছুই বলতে চাই না।’

বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে সাবেক এক ছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজে যৌন হয়রানির অভিযোগ এটাই নতুন নয়। মেডিকেলের ওই ছাত্রীর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে আলোচনায় এসেছে আরেক ঘটনা। সেটি প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের এক প্রভাষককে ঘিরে। ওই শিক্ষক গত জানুয়ারিতে সাবেক এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।

বর্তমানে বগুড়া শহরের একটি সরকারি কলেজে পড়ুয়া মেয়েটি প্রথম আলোকে বলেন, ২০ জানুয়ারি এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান তিনি। সেখানে ওই প্রভাষকের সঙ্গে দেখা হয়। সাঁঝবেলায় নিজের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দেখে সালাম দেন। তিনি বাসায় নেওয়ার জোরাজুরি করেন। রাজি না হওয়ায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। বাসায় নিতে হাত ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। চিৎকার দিলে তিনি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

ওই ছাত্রীর ভাষ্য, পরদিন তিনি অধ্যক্ষের কাছে বিচার দাবি করেন। কিন্তু কোনো আশ্বাস মেলেনি। ফলে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু বিচারের বদলে উল্টো অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ শুরু হয়। শিক্ষকেরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন। মাসখানেক পর অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয় মেয়েটিকে। সেখানে মৌখিকভাবে শিক্ষক ক্ষমা চান। বিষয়টি মীমাংসা করতে মেয়েটিকে বাধ্য করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শুক্রবার একাধিকবার ফোন দিলেও ওই প্রভাষকের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরে মেয়েটিই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ফলে বিষয়টির মিটমাট হয়ে যায়। চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছিল উল্লেখ করে শিক্ষক ও ছাত্রী দুজনই মিটমাট করে নেন। ফলে অভিযোগের তদন্তের আর প্রয়োজন হয়নি।

বগুড়ার প্রবীণ শিক্ষক বজলুল করিম বাহার বলেন, যেকোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে সঠিক তদন্ত দরকার। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ, এ ধরনের অভিযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনে দিনে শিক্ষকতা পেশার মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।