শিগগিরই অভিযোগপত্র দেবে পুলিশ

ইউএনও ওয়াহিদা খানম
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় জব্দ করা বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিগগিরই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওসি বলেছেন, ‘এ মামলায় স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি রবিউল ইসলামের ডিএনএ, আঙুলের ছাপ, পরনের কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন আলামত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।’

রবিউলকে নির্দোষ দাবি করে পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন। আজ দিনাজপুর প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে হামলার সঙ্গে রবিউলের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। আজ সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, পুলিশ রবিউলকে রিমান্ডে নিয়ে চাপ দিয়ে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের হলরুমে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে রবিউলের বড় ভাই মো. রহিদুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এ সময় রবিউলের মা রহিমা খাতুন, চাচা এমাজউদ্দীন ও তাঁর তিন ভাই উপস্থিত ছিলেন।

২ সেপ্টেম্বর রাতে বাসার প্রহরীকে আটকে রেখে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা উমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর রাতে রবিউলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ১১ জানুয়ারি রবিউলকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে রবিউল বাড়িতেই ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনা আমরা পরদিন সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা রবিউলকে ধরে নিয়ে যান। তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঘটনার দায় স্বীকার করানো হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচানোর অসৎ উদ্দেশ্যেই তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

লিখিত বক্তব্য পড়া শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রহিদুল। তখন তিনি বলেন, ‘রিমান্ডের প্রথম ছয় দিন রবিউলের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পায়নি পুলিশ। পরে আরও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। চাপ প্রয়োগ করে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত রবিউলের সঙ্গে আমরা দেখা করার সুযোগও পাইনি।’

২ সেপ্টেম্বর রাতে বাসার প্রহরীকে আটকে রেখে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা উমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর রাতে রবিউলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিউল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় ফরাশ পদে চাকরিতে যোগ দেন। গত বছর ডিসেম্বরে তাঁকে ঘোড়াঘাটের ইউএনওর বাসায় মালি হিসেবে বদলি করা হয়। ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে ১১ জানুয়ারি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে।

রবিউলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী, সব ধরনের আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। সেগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এখন ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে পৌঁছাবে। এরপরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
ইমাম জাফর, ওসি, দিনাজপুর ডিবি

জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ইমাম জাফর আজ বলেন, রবিউল ঘটনার দায় স্বীকার করে ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় পুলিশ সাক্ষী হিসেবে আদালতের মাধ্যমে পাঁচজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে। রবিউলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লিপিবদ্ধ ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, সব ধরনের আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। সেগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এখন ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে পৌঁছাবে। এরপরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

ইমাম জাফর আরও বলেন, যেহেতু ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর, তাই মামলার বিষয়ে যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন বা ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকে, সে জন্য চৌকস কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তদন্তের শুরু থেকেই পুলিশ হেড কোয়ার্টারের একজন বিশেষ প্রতিনিধিও কাজ করছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রবিউল বলেছেন, চাকরির দুই বছরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভালো ব্যবহার পাননি তিনি। ঘোড়াঘাটে বদলির পর ইউএনও ওয়াহিদা বিভিন্ন অভিযানে তাঁকে সঙ্গে রাখতেন। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন তিনি। এরপর চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তসহ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এসব বিষয়ে ক্ষোভ থেকে গত এপ্রিলের মাসের শুরুতে এই হামলার পরিকল্পনা করেন রবিউল।