শিবচরে পদ্মায় বিলীন কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাজীরসুরা এলাকায়।
প্রথম আলো

মাদারীপুরের শিবচরে নদীভাঙনের প্রবণতা বেড়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে ফসলি জমি ও গাছপালা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। রোববার সকালে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল বন্দরখোলা ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের দোতলা ভবন ও একটি বাজার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বন্যা ও নদীভাঙনে বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন, চরজানাজাত ইউনিয়নের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক স্থাপনা ও ইউনিয়ন পরিষদ, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের তিনতলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়। এ ছাড়া একটি মাদ্রাসা, সেতু, কালভার্ড, রাস্তাঘাট, শত শত বসতঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে অংখ্য স্থাপনা।

উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, বন্দরখোলা ইউনিয়নে ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা একতলা বিশিষ্ট কাজীরসুরা কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পদ্মায় বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। ভবনটির তিনটি পিলার ইতিমধ্যে নদীর মধ্যে চলে গেছে। যেকোনো সময় ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের দোতলা এই ভবন। রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাজীরসুরা এলাকায়।
প্রথম আলো

কাজীরসুরা এলাকার বাসিন্দা মোশারফ ব্যাপারী বলেন, ‘পদ্মায় একের পর এক সব গিইলা খাইতাছে। যেমনে ভাঙতাছে হেইয়াতে আমাগো ঘরবাড়ি আর থাকব না। এহনে কী করুম, কই যামু কিছুই বুঝতাছি না।’ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত দলিলউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘ফসলি জমি ও গাছপালা দুই রাইতের মধ্যে পদ্মা ভাইঙা লইয়া গেছে। ঘরের মইধ্যেও ফাটল দেহা দেছে। ঘরে এহন রাতে ঘুমাই না। ঘরবাড়ি না থাকলে পোলামাইয়া লইয়া পথে বইতে হবে।’

জুন ও জুলাই মাসে বন্দরখোলা এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে ৩০ হাজার ৬০০ বালুভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। তাই ৩১ জুলাইয়ের পর থেকে আর ডাম্পিং করা হয়নি।

বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন ব্যাপারী বলেন, কয়েক বছর আগেও ইউপি ভবন ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে নদী প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ছিল। আজ কমিউনিটি ক্লিনিক নদীর ভাঙনে শেষ। যেকোনো সময় ইউনিয়ন পরিষদ নদীতে ভেঙে যাবে। ভেতরের সব মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরিষদের এই ভবন ভেঙে গেলে ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে কাজীরসুরা বাজার।

ভাঙনের বিষয়ে মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে বন্দরখোলা এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে ৩০ হাজার ৬০০ বালুভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। একের পর এক স্থাপনা ভেঙে যাচ্ছিল। তাই ৩১ জুলাইয়ের পর থেকে আর ডাম্পিং করা হয়নি। পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে বন্দরখোলায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর জন্য আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি ওই এলাকা পরিদর্শনও করেছেন।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর বন্যার পানি বেশি বেড়েছে এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন থামছে না। সম্প্রতি পদ্মার ভাঙনে দুটি উচ্চবিদ্যালয়, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা ভেঙে গেছে। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল। দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটিও বিলীন হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের সেবাদানে যেন বাধা সৃষ্টি না হয়, এর জন্য ইউপি ভবন ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ অনত্র চলবে।