শিশু গৃহকর্মী সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি

গৃহকর্মী সাদিয়া পারভীনের লাশ দেখে স্বজনদের আহাজারি। শনিবার বিকেলে শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায়
প্রথম আলো

শেরপুরের শ্রীবরদীর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিবের স্ত্রী রুমানা জামানের শারীরিক নির্যাতনে শিশু গৃহকর্মী সাদিয়া পারভীনের (১০) মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার লাশ শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সিপাড়ায় নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছালে বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
সাদিয়া শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সিপাড়ার ট্রলিচালক সাইফুল ইসলামের মেয়ে।
শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সাদিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত গৃহকর্মী সাদিয়া এই হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার বিকেলে মারা যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
শনিবার বিকেলে মৃত সাদিয়ার লাশ দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার খালা কাজল ও ছালমা বলেন, ‘আমাদের ভাগনিকে শারীরিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী রুমানা জামানের ফাঁসির দাবি করছি। যাতে এ ধরনের অপকর্ম আর কেউ না করে।’

সাদিয়ার বাবা সাইফুল প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার একটি কবরস্থানে তাঁর মেয়েকে দাফন করা হয়। তিনি এ ঘটনায় দায়ী আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী রুমানা জামানের ফাঁসি দাবি করেন।
এদিকে শেরপুরের মানবাধিকার সংগঠন আমাদের আইনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি নূর ই আলম ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা আহসান হাবিব নিজ বাসায় শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাঁকেও আইনের আওতায় এনে আইনানুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে হবে।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আলম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, শিশু সাদিয়াকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। মামলার একমাত্র আসামি আওয়ামী লীগের নেতা আহসান হাবিবের স্ত্রী রুমানা জামানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। তদন্তে এ ঘটনায় অন্য কারোর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

উল্লেখ্য, সাদিয়া পারভীনকে প্রায় এক বছর আগে আহসান হাবিব ও তাঁর স্ত্রী রুমানা জামান গৃহকর্মী হিসেবে তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। পরে রুমানা জামান প্রায় সময় শিশু সাদিয়ার কাজকর্মে ভুলভ্রান্তির জন্য তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এতে সাদিয়া গুরুতর আহত হয়ে গত শুক্রবার মারা যায়। নির্যাতনের ঘটনায় সাইফুল বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রুমানা জামানের বিরুদ্ধে শ্রীবরদী থানায় মামলা করেন।
২৩ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আ.লীগ নেতার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে চিকিৎসাধীন গৃহকর্মী সাদিয়ার মৃত্যু’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।