শিশু পরিবার থেকে আর মায়ের কাছে ফিরবে না জুবায়ের

গোপালগঞ্জে সরকারি শিশু পরিবারের কার্যালয়। মঙ্গলবার রাতে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

ছেলেটির বাবা তাকে, তার বোন ও মাকে ছেড়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। অভাবের তাড়নায় আশ্রয় নিয়েছিল গোপালগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে। কিন্তু এখান থেকে বাড়ি ফিরে আর মা-বোনের মুখ দেখা হলো না তার। আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মারা যাওয়া ওই শিশুর নাম জোবায়ের খান (১২)। সে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কড়াগাতি গ্রামের ইঞ্জিন খানের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, জুবায়েরকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার পর তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

শিশু পরিবারের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে জোবায়ের গোসল করার জন্য শিশু পরিবারের তিনতলা ভবনের দোতলার গোসলখানার দিকে যায়। এ সময় সে তার সহপাঠী সাজেদুল শেখকে গোসল করার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। সাজেদুল শেখ জোবায়েরকে তার জ্যাকেট ধোয়ার কথা বলে গোসলখানায় আগে ঢোকে। জ্যাকেট ধোয়ার পর তা রোদে শুকাতে দিতে যায় সাজেদুল। সেখান থেকে গোসলখানার কাছে এসে সে বারান্দায় থাকা একটি বাঁশের সঙ্গে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় জোবায়েরকে ঝুলে থাকতে দেখে।

সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক মো. মোশররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জোহরের নামাজ পড়ে এসে জানতে পারি, আমাদের এখানে একটি ছেলের কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। আমরা তখন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। আমি জানি না এটা কীভাবে ঘটল। তদন্ত করলে আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।’

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি শিশু পরিবারের বাসিন্দা জোবায়েরের লাশ আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে, আসলে এখানে কী ঘটেছে।

জোবায়েরের খালা নাসরিন আক্তার বলেন, জোবায়ের যখন ছোট, তখন ওর বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যান। ওর মা ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। সংসার চালাতে না পেরে ছেলেকে সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে আসেন। আজ তাঁর বোনের কোল খালি হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার ভাগনেকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।’