শিশুকালেই সংসারের হাল ধরার প্রস্তুতি তাদের

রাজশাহীতে সাড়ে ৭ হাজার শিশুকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অনেক শিশু নগরের বিভিন্ন কারখানা, প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।

  • আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস।

  • এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’।

  • রাজশাহীতে ৭ হাজার ৫০০ শিশুকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ফাইল ছবি

অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় শিশুটি প্রথম স্থান অধিকার করে। কিছুদিন আগে তার নবম শ্রেণিতে নাম নিবন্ধন করার কথা ছিল। কিন্তু পরিবার একসঙ্গে ৪০০ টাকা দিতে না পারায় এখনো শিশুটি নিবন্ধন করতে পারেনি। এখন সে বাবার সঙ্গে রাজশাহীর সাহেববাজার এলাকায় মাছ বিক্রি করছে।

এই শিশুর মতো রাজশাহী নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, মোটরসাইকেল গ্যারেজ কিংবা যানবাহনে কাজ করতে দেখা যায় শিশুদের। তাদের কেউ বিদ্যালয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারকে অর্থনৈতিক সহায়তা করতে কাজ করে। আবার কেউ বিদ্যালয়ে যাওয়া ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি কাজে নেমেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’। রাজশাহীতে শিশুশ্রম প্রতিরোধে একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। তাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় আনা। অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন, করোনার পর রাজশাহীতে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছিল। সম্প্রতি তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাজশাহীতে ৭ হাজার ৫০০ শিশুকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে।

আরিফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভেতরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আদলে ২৫ জনের একেকটি দল করে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ছয় মাস ধরে এই প্রশিক্ষণ চলছে। দেড় বছর চলবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে শিশুরা ১ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তত দিনে এসব শিশুর কাজে যোগ দেওয়ার মতো বয়সও হবে।

তবে অধিদপ্তরের এ উদ্যোগের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে নগরের অনেক শিশু। গত কয়েক দিনে নগরের সাহেববাজার, কেদুর মোড়ের মাছের দোকান, রেলগেট এলাকার মোটরসাইকেল গ্যারেজ, বাজেকাজলা এলাকার ওয়েল্ডিং কারখানায় শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে।

সাহেববাজারে মাছের দোকানে কাজ করা একটি শিশুর দৈনিক আয় হয় ২০০ টাকা। বর্তমানে সে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার বড়। সে জানায়, পড়াশোনায় তার আর মন বসছে না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাছের দোকানে থাকে। এরপর বাসায় ফিরে টিভি দেখে। দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়। বাসায় ফেরে রাত নয়টার দিকে।

রেলগেট এলাকার একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে কথা হয় অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া আরেক শিশুর সঙ্গে। তার বাবা বাসচালক। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। দুই বছর ধরে মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ শিখছে। তবে গ্যারেজে কাজের চাপ থাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। সপ্তাহে গ্যারেজমালিক তাকে হাজারখানেক টাকা দেন।

বিদ্যালয়ে নিয়মিত না গিয়ে গ্যারেজে কাজ শেখার কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, তার বাবার হার্টের অসুখ আছে। যেকোনো সময় অবস্থা গুরুতর হতে পারে। এ আশঙ্কায় সে এখন থেকেই কাজ শিখছে। কাজ শেখা শেষ হলে নিজেই একটা গ্যারেজ দেবে।

শিশুটির কথামতো তার বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানান, অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া শিশুটি অনেক মেধাবী। সংসারের হাল ধরার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে।