শিশুটির পিঠজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন

ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার কুষ্টিয়ার শিশু চাঁদনি (১০)। খোকসা হাসপাতাল থেকে তোলা
প্রথম আলো

১০ বছরের শিশু চাঁদনি খাতুন। অভাবের সংসার থেকে বাবা তমিজ উদ্দীন মেয়েকে ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজে পাঠান। কিন্তু ৯ মাস পর গতকাল বুধবার শরীরে দগদগে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে কুষ্টিয়ার বাড়িতে ফিরে এসেছে সে। বিকেলেই তাঁকে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তমিজ উদ্দীনের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করেন তিনি।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে একই গ্রামের মাসুদুজ্জামান রান্টুর মেয়ে লিছা (২৭) মাসিক ১ হাজার টাকা বেতনের শর্তে ঢাকার বাসায় কাজের জন্য চাঁদনিকে নিয়ে যান। লিছার দেড়-দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মূলত শিশুটিকে দেখাশোনার কথা বলেই চাঁদনিকে নিয়ে যান তিনি। তাঁরা মিরপুর-১১ এলাকায় থাকেন। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই তাঁরা চাঁদনির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

থালাবাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ শিশুটিকে করতে হতো। একটু কিছু হলেই কথায় কথায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো। লোহার খুন্তি গরম করে ছেঁকা দেওয়া হতো। রাতে মারপিটের পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝের ওপর ফেলে রাখা হতো।

খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে বর্তমানে চিকিৎসাধীন চাঁদনি। শুয়ে থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে। সাংবাদিকদের সে বলে, ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চার দিন পর থেকেই তার ওপর লিছা নির্যাতন শুরু করেন। থালাবাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ তাকে করতে হতো। একটু কিছু হলেই কথায় কথায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো। লোহার খুন্তি গরম করে ছেঁকা দেওয়া হতো। রাতে মারপিটের পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝের ওপর ফেলে রাখা হতো।

চাঁদনির বাবা তমিজ উদ্দিন দাবি করেন, অনেকটা জোর করেই লিছা চাঁদনিকে ঢাকায় নিয়ে যান। মাসে মাসে মেয়ের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা থাকলেও একটা টাকাও দেননি লিছা। গত ৯ মাসে তাঁদের চাঁদনির সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি। কয়েক দিন আগে খবর পেয়ে বুধবার চাঁদনিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।

মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবেও সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শামীম মাহমুদ, খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক

খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শামীম মাহমুদ বলেন, মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবেও সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তবে লিছার বাবা মাসুদুজ্জামান রান্টু দাবি করেন, শিশুটিকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এগুলো তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রাম্য চক্রান্ত। শিশুটির শরীরে আগে থেকে ঘা-পাঁচড়া ছিল।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, নির্যাতনের ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।