শিশুদের বর্ণনায় উদ্ঘাটিত হলো বন্য প্রাণী হত্যা

ছয়টি শিয়াল ও দুটো মেছো বাঘ পাহাড়ি ঢলের তোড়ে লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু বাঁচতে পারেনি। ‘কেওর’ দিয়ে বন্দী করে সেগুলোকে হত্যা করে লোকজন। সেই ছবি আবার দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।


ফেসবুকে ছবি দেখে তদন্তে এলাকায় যায় বন বিভাগের একটি দল, কিন্তু এলাকার কেউ স্বীকার করছিল না ঘটনাটি। বড়রা স্বীকার না করায় শেষে শিশুদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাদের বর্ণনায় উদ্‌ঘাটিত হয় বন্য প্রাণী হত্যার ঘটনা।


ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামে। গতকাল শনিবার দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সন্ধ্যায় জৈন্তাপুর থানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। শিশুদের বর্ণনা থেকে প্রাণী হত্যার সত্যতা উদ্‌ঘাটিত হওয়ায় শেষে বড়রাও সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বন বিভাগের পরিদর্শনকারী দলটি। বড়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বন্য প্রাণী হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে পাঁচজনকে।


সিলেট বন বিভাগ জানায়, জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন বন বিভাগের সারি রেঞ্জভুক্ত। চা-বাগান, টিলা, বনজঙ্গল ঘেরা ওই এলাকার পশ্চিম বালিপাড়ায় গত শুক্রবার পাহাড়ি ঢল নামে। ঢলের তোড়ে বন থেকে একসঙ্গে ছয়টি শিয়াল, দুটো মেছো বাঘ ও একটি বেজি পশ্চিম বালিপাড়ায় আশ্রয় নেয়। তখন গ্রামের একদল লোক ‘কেওর’ (জ্যান্ত শিকার করার কৌশল) দিয়ে ছয়টি শিয়াল, দুটো মেছো বাঘ ও একটি বেজি আটক করে। পরে সেগুলোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত পশুগুলোর ছবি দেওয়া হয় ফেসবুকে।


বন বিভাগের সারি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে জানান, ফেসবুকে ছবি দেখে শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের কোনো লোক ঘটনাটি স্বীকার করছিলেন না। ছবিতে কিছু শিশুকেও দেখা যায়। একপর্যায়ে কয়েকজন শিশুর সঙ্গে একান্তে কথা বললে তারা ঘটনার বর্ণনা দেয়। শিশুরা সত্য বলায় শেষে গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ ঘটনাটি স্বীকার করেন।


বন বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, বন্য প্রাণী হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুজনের নাম পাওয়া গেছে। এ দুজন হচ্ছেন পশ্চিম বালিপাড়ার আবদুল হালিম (২৫) ও মো. শাহরিয়ার আহমদ (২২)। এ দুজনের সঙ্গে আরও সাত-আটজন ছিলেন। তাঁদের আসামি করে জৈন্তাপুর থানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হয়েছে।


মামলার এজাহারে বলা হয়, বন্যাকবলিত হয়ে লোকালয়ে আশ্রয় নেওয়া ছয়টি শিয়াল, দুটো মেছো বাঘ ও একটি বেজিকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেরে ফেলা বন্য প্রাণীর আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। বন্য প্রাণী শিকার ও অনুমতি ছাড়া নির্মমভাবে হত্যা করে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২–এর ৬ ও ১০ ধারার বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। এতে ৩৯ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে।


জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক মামলার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, বন বিভাগের সারি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাদ উদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দেন। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলাটি নথিভুক্ত করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।