শিশুশিক্ষার্থীর পায়ে শিকল পরিয়ে নির্যাতন, অধ্যক্ষ কারাগারে

ফেনী জেলার মানচিত্র

মাদ্রাসার এক শিশুশিক্ষার্থীকে (১০) শাসনের নামে দুই পায়ে শিকল পরিয়ে তালা দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে আজ সোমবার দুপুরে ওই অধ্যক্ষকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গত শনিবার রাতে ওই শিক্ষার্থীকে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

শিশুটি দাগনভূঁইয়া উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের দেউলিয়া নুরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার নাজরা শ্রেণির আবাসিক ছাত্র। তার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়। পুলিশ জানায়, উদ্ধারের পর গতকাল রোববার সকালে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফকরুল ইসলামকে আটক করা হয়। ওই দিন রাতে শিশুটির বাবা শিশু নির্যাতনের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ ফখরুল ইসলামকে ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমান তাঁকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে কারা পুলিশের মাধ্যমে ফখরুলকে ফেনী জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই মাদ্রাসায় গত রোববার আরও এক শিশুশিক্ষার্থীকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর ওই মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের নানা বর্ণনা জানা যায়। নির্যাতন সইতে না পেরে একটি শিশু শনিবার রাতে পায়ে শিকল পরা অবস্থায় মাদ্রাসা থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। সে রাত তিনটার দিকে দাগনভূঁইয়া থানার টহল পুলিশের গাড়ির সামনে পড়ে। পুলিশ পায়ে শিকল পরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। শিশুটির কাছ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে গতকাল সকালেই পুলিশ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে আটক করে।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও পুলিশের ভাষ্য, চলতি বছরের শুরুতে ১০ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থীকে পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের দেউলিয়া নুরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার নাজরা শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ শোনা যেত। এবার তা প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার শিশুটির বাবা তাঁর ছেলেকে দেখতে মাদ্রাসায় যান। তখন মাদ্রাসায় নির্যাতনের বিষয়টি বাবাকে জানায় ওই শিক্ষার্থী। এ মাদ্রাসায় আর পড়বে না বলেও জানায় সে। তারপরও শিশুটিকে বুঝিয়ে তাকে মাদ্রাসায় রেখে আসেন তিনি।

পুলিশ জানায়, ওই শিক্ষার্থীর বাবা মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়ার পর শিশুর অভিযোগের বিষয়টি অধ্যক্ষ জানতে পারেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে মাদ্রাসার একটি কক্ষে আটকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করেন। রাত তিনটার দিকে শিশুটি কৌশলে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে রাস্তায় চলে যায়।

দাগনভূঁইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ওই শিশুর বাবা গতকাল রাতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। উদ্ধার হওয়া শিশুকে তাঁর বাবার হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।