শুকনা মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত লোকালয়

সাতক্ষীরার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর রিং বাঁধ ভেঙে দোয়ারঘাট ও জেলেখালিসহ চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়। মঙ্গলবার দুপুরে জেলেখালি গ্রাম থেকে তোলাপ্রথম আলো

শুকনা মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনির অন্তত চারটি গ্রাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রিং বাঁধ চার স্থানে ভেঙে যায়। এতে শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই শতাধিক চিংড়ির ঘের প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে পানির প্রবল চাপে একই উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিশখালি এলাকার পাউবোর বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে ৪-৫টি গ্রাম আবার প্লাবিত হতে পারে।

আশাশুনির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল  হুসাইন খান বলেন, উপজেলা সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকায় বাঁধের কয়েক স্থান ভেঙে শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি চিংড়ির ঘের প্লাবিত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ দেওয়া ছাড়া এর কোনো প্রতিকার নেই। বিষয়টি তিনি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন হরিশখালি এলাকায় বাঁধ ভাঙেনি, তবে লোকালয় পানি ঢুকছে। যেখানে ইতিমধ্যে কাজ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আশাশুনি সদর ও শ্রীউলা ইউনিয়নে গত বছরের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে পাউবোর বাঁধ ভেঙে যায়। গত ১০ মাসেও ভেঙে যাওয়া বাঁধের অনেক স্থানে সংস্কার করতে পারেনি পাউবো। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধ সুভাষ সরকার বলেন, কোথাও কোথাও যেনতেন উপায়ে রিং বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার রাত থেকে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবল চাপে রিং বাঁধ ভেঙে পড়ছে। এতে মানুষ চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে।

আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট গ্রামের বাসিন্দা পুলিন দাস বলেন, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ কোনো রকমে মেরামত করে ২-৩ মাস হলো নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা বন্ধ হয়েছে। গত বছরে সেই আম্পানে পাউবোর বাঁধ ভাঙার পর ওই বাঁধ আর স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হয়নি। সড়কের ওপর রিং বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। সোমবার রাতে বাঁধের থেকে জোয়ারের পানি চাপে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রিং বাঁধের পাঁচ স্থান ভেঙে দয়ারঘাট ও জেলেখালিতে ঢুকে শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোট-বড় দুই শতাধিক চিংড়ির ঘের প্লাবিত হয়েছে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর রিং বাঁধ ভেঙে দোয়ারঘাট ও জেলেখালিসহ চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়। মঙ্গলবার দুপুরে জেলেখালি গ্রাম থেকে তোলা
প্রথম আলো

ওই এলাকার তাহমিনা খাতুন, তারামানি দাস জানান, তাঁদের বাড়ির আঙিনায় পানি থই থই করছে। সাতক্ষীরার প্রতাপনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, আম্পানের পর পাউবো হরিশখালি এলাকায় বাঁধ সংস্কার করতে বিলম্ব করায় এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ওই আধা কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করে। কিন্তু তারপর জোয়ারে জোয়ারে ওই বাঁধ আবার ভাঙতে থাকে। বর্তমানে বাঁধ সরু আইলে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় সোমবার থেকে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের চাপে ২-৩ স্থানে পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। সোমবার রাত থেকে এলাকার মানুষ পাউবোর সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁধ যাতে না ভেঙে যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওই বাঁধের কোনো এক স্থান ভেঙে গেলে প্রতাপনগর, কল্যাণপুর, মাদারবাড়িয়া, বন্যতলা, কুড়িকাউনিয়া গ্রামের আংশিক ভেঙে কয়েক হাজার মানুষ নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউপির দায়িত্বে থাকা পাউবোর শাখা কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, ভেঙে যাওয়া বাঁধে বস্তা ফেলে পানি আটকানো হয়েছিল। অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে বাঁধের কয়েক স্থান দিয়ে পানি উপচে পড়লে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। স্থানীয় মানুষ ও পাউবো একসঙ্গে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সোমবার রাত থেকে।