শুনানির বিরুদ্ধাচরণ দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গঠনের অঙ্গীকারের অন্তরায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও সহ–উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুষ্ঠেয় উন্মুক্ত শুনানির বিরুদ্ধাচরণ করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের একাংশ।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান, তাঁদের সম্মতি না নিয়েই সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ নিয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠিয়েছেন, যা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও শিক্ষাঙ্গন গঠনের অঙ্গীকারের অন্তরায়।

ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বিকেলে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যম ও ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ–বাণিজ্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ১৭ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসিতে গণশুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের মেয়াদোত্তীর্ণ স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মজিবুর রহমান এই রকম একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে দলীয় সদস্যদের সম্মতি গ্রহণ না করে বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ নিয়ে একটি চিঠি ইউজিসিতে পাঠিয়েছেন। এই চিঠি তাঁদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

গত ৩০ আগস্ট ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটিকে ঘটনাস্থলে (বিশ্ববিদ্যালয়) এসে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানিয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠান এম মজিবুর রহমান। চিঠিতে ইউজিসির শুনানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং ৭৩–এর অ্যাক্টের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে ওই চিঠির জবাবে ইউজিসি ২ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, উপাচার্যের অনুরোধেই তারা শুনানির আয়োজন করেছে।
এ সম্পর্কে আজকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষক মজিবুর রহমানের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন চিঠির মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তাঁরা। তাঁর এই কার্যকলাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও শিক্ষাঙ্গন গঠনের অঙ্গীকারের অন্তরায়। তাঁরা দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করেন, ৭৩ অধ্যাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য প্রণীত, যা কোনোভাবেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি ও অনিয়মের লাইসেন্স প্রদান করে না। ফলে রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রমে আইনের ব্যত্যয় হয় না। এই চিঠি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। তদন্তের এই পর্যায়ে এসে এই চিঠি তদন্তকাজকে বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াস। তাই ইউজিসিতে প্রেরিত চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাঁরা এই চিঠি পাঠানোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছেন।

এদিকে, ৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির ডাকা গণশুনানি বেআইনি, আদালত অবমাননাকর ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্বের শামিল। উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের কোনো ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে দেওয়া হয়নি এবং রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত তাই শুধু নিয়োগকর্তা দ্বারা সম্পন্ন করা আইনসিদ্ধ।

আরও পড়ুন

গত ৪ জানুয়ারি উপাচার্যের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্তসংবলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসিতে জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের একাংশ। এরও কয়েক মাস আগে থেকে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকসমাজ’ ব্যানারে তাঁরা আন্দোলন করে আসছিলেন।