শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন

সংযোগ সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতুর কাছে।ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকিতে পড়েছে নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক। সেতু থেকে ২০০ গজের মতো দূরত্বে সংযোগ সড়কের তলদেশে মাটি বালু সরে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য, এবার তিন দফা বন্যায় তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এতে পানির স্রোত এসে সংযোগ সড়কে ধাক্কা দেওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাউবোর রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার পর ওই স্থানে মূল সেতুর তলদেশে চর জেগে ওঠে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। পানির প্রবল স্রোত সেতুর সংযোগ সড়কে গিয়ে আঘাত হানছে। ইতিমধ্যে এখানে নদীর উজানে শংকরদহ, ইছলি, ইশরকুল এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার অনেক বসতভিটা, আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর প্রান্তে মাত্র ২০০ গজ দূরত্বে সড়ক ভাঙনের কবলে পড়েছে। সেখানে সেতুর সংযোগ সড়কের পূর্ব দিকে অবিরাম আছড়ে পড়ছে স্রোত। ইতিমধ্যে সড়কের তলদেশ থেকে মাটি ও বালি সরে গেছে।

সংযোগ সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতুর কাছে।
ছবি: প্রথম আলো

পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে। তাই সেখানে কোনো কিছু ঘটলে বিষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দেখার কথা।

এলজিইডি সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্বেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকাকে সংযুক্ত করেছে সেতুটি। তিস্তা নদীর ওপরে নির্মিত এই সেতু এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের এই সড়ক সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার। একই বরাদ্দের ভেতরে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১ হাজার ৩০০ মিটার নদীশাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

সেতুর পশ্চিমে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে মাটি, বালুর বস্তা ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল তখন। কিন্তু এবারের তিন দফা বন্যায় পুরো বাঁধটি নদীতে বিলীন হয়েছে।

২০১২ সালের ১২ এপ্রিল সেতুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন সেতুটি এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করে। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেতুটি উদ্বোধন করেন। এটি প্রথমে দ্বিতীয় তিস্তা সড়কসেতু নামে পরিচিত ছিল। পরে শেখ হাসিনা সেতু হিসেবে নামকরণ করা হয়। গত বছর জুন-জুলাই মাসে সেতু ও এর সংযোগ সড়ক রক্ষায় ৩০ লাখ টাকার কাজ হয়। সেতুর পশ্চিমে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে মাটি, বালুর বস্তা ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল তখন। কিন্তু এবারের তিন দফা বন্যায় পুরো বাঁধটি নদীতে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এখন স্রোত উল্টো দিকে যাচ্ছে। ফলে শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কে গিয়ে পানি আছড়ে পড়ছে। এতে সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে। মূল সেতুটির জন্যও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

এলজিইডির রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।