শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় তৃতীয় দিনের মতো রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। গতকাল বুধবার জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে এ যুক্তিতর্ক হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত মুখার্জী ও শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল লতিফ, সাবেক পিপি এস এম হায়দর, ওসমান গনি প্রমুখ।

বিবাদীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী শাহানারা আক্তার, আবদুল মজিদ, মিজানুর রহমান ও তোজাম্মেল হোসেন। একপর্যায়ে তাঁরা আজকের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অসমাপ্ত রাখেন। কাল বৃহস্পতিবার বিবাদীপক্ষ অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে ২০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি পৃথকভাবে তুলে ধরে। এ সময় বলা হয়, সাক্ষীদের জবানবন্দিতে মামলার অভিযোগ পুরোপুরি প্রমাণিত হয়েছে।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার জন্য বিভিন্ন রকম চেষ্টা করা হয়। কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সংঘটিত শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা তারই অংশ। ন্যায়বিচার হলে আসামিরা প্রত্যেকে দোষী প্রমাণিত হবেন ও সর্বোচ্চ সাজা পাবেন।

২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে একজনকে দেখে মাগুরা যাচ্ছিলেন। কলারোয়া বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁর গাড়ির বহরে হামলা চালান বলে অভিযোগ।

বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল মজিদ বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের মামলার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মামলায় তথ্যগত অসংলগ্নতা ও অসংগতি রয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিরা কোনোভাবেই দোষী প্রমাণিত হননি। মামলায় বলা হয়েছে, তৎকালীন বিএনপিদলীয় সাংসদ হাবিবুল ইসলামের পরামর্শ ও নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে বাদী তাঁর এজাহারে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই দিন হাবিবুল ঢাকায় ছিলেন।

আদালত পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় জানান, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কলারোয়ার বাসিন্দা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষণের শিকার স্ত্রীকে দেখে মাগুরা যাচ্ছিলেন। এ সময় কলারোয়া বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁর গাড়ির বহরে হামলা চালান। এ ঘটনায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করেন। থানা মামলাটি না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আদালতে মামলাটি করেন।

মামলাটি প্রথম দফায় খারিজ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে তা পুনরুজ্জীবিত হয়। এই মামলায় সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালে আসামিপক্ষের আবেদনে মামলাটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। ৩ বছর পর আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করে মামলাটি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলায় ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।