গৃহবধূকে ধর্ষণের পর পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৩

প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক গৃহবধূকে (২২) হাত-মুখ বেঁধে দুজন মিলে ধর্ষণের পর তাঁর পরিবার যেন থানায় যেতে না পারে, এ জন্য পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত দুই ধর্ষকসহ গ্রামের এক মাতবরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের জামাইল স্কুলপাড়ার হাসান আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম ওরফে রুবেল (১৯), জামাইল হাটখোলা পাড়ার বাচ্চু ফকিরের ছেলে আবদুল জলিল (৩২) এবং গ্রামের মাতবর জামাইল মজলিশি পাড়ার সাইফুল ইসলাম (৫৫)। আজ বুধবার দুপুরের দিকে এই তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

ধর্ষণের ঘটনা জানার পর বিচার চাইতে থানায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধর্ষণকারীরা ও গ্রাম্য মাতবরেরা টাকা নিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে আমাদের সবাইকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এ কারণে সঙ্গে সঙ্গে থানায় আসতে পারিনি।
গৃহবধূর স্বামী

এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত সোমবার। উপজেলার একটি গ্রামের এক দিনমজুরের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্ত্রী সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশে নির্জন স্থানে গোবরের ঘুঁটা শুকাতে যান। এ সময় বখাটে রবিউল ইসলাম ওই গৃহবধূকে জোরপূর্বক নিজ বাড়ির শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এরপর সেখানে থাকা আবদুল জলিলের সঙ্গে রবিউল ওই গৃহবধূকে হাত-মুখ বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এরপর বিষয়টি গৃহবধূর পরিবারে জানাজানি হলে তাঁরা যাতে বিষয়টি প্রকাশ না করেন এবং আইনের আশ্রয় না নেন এ জন্য গৃহবধূসহ তাঁর পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখেন অভিযুক্ত দুই ধর্ষক। একপর্যায়ে ধর্ষণের বিষয়টি টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলান গ্রাম্য মাতবরেরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পায়। এ সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান মাতবর ও দুই ধর্ষককে আটক করে।

এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ধর্ষণ, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা ও বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগে রুবেল, জলিল, গ্রামের তিন মাতব্বরসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা করেন। মামলার অন্য দুই আসামি পলাতক থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা জানার পর বিচার চাইতে থানায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধর্ষণকারীরা ও গ্রাম্য মাতবরেরা টাকা নিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে আমাদের সবাইকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এ কারণে সঙ্গে সঙ্গে থানায় আসতে পারিনি।’

থানাহাজতে আটক গ্রাম্য মাতবর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণকারীদের সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়েছে—এ কথা সত্য। তবে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা সঠিক নয়।’

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিদের ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।