শৈলকুপা-কাতলাগাড়ি পাকা সড়কের পিচ দেখা যায় না

ট্রাক চলছে। সঙ্গে উড়ছে ধুলা। সম্প্রতি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাতলাগাড়ি বাজার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের বেশির ভাগ ঢেকে আছে ধুলো-বালিতে। পাকা সড়ক কিন্তু পিচ দেখা যায় না। সড়কের কোনো কোনো স্থান ভাঙতেও শুরু করেছে। সড়কটি দিয়ে চলাচল করাই দায়। সড়কে চলাচলকারীদের শরীর পোশাক ধুলায় সাদা হয়ে যায়। এ অবস্থা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শৈলকুপা-কাতলাগাড়ি সড়কের।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, গড়াই নদ থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন এক ব্যবসায়ী। শৈলকুপা-কাতলাগাড়ি সড়ক দিয়ে সেই বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এ কারণেই সড়কটির দুরবস্থা। সড়কটি দিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও কুষ্টিয়ার খুকসা উপজেলার মানুষ চলাচল করে থাকেন। তাঁরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

কাতলাগাড়ি থেকে শৈলকুপার দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। সম্প্রতি কাতলাগাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ধুলোবালিতে ঢেকে আছে সড়ক। ধুলোয় জুতা আটকে যাচ্ছে। সড়কে বালুবাহী ট্রাক চলাচল করছে।

কৃষ্ণপুর গ্রামে গড়াই নদ থেকে বালু তুলে ট্রাকে ভরা হচ্ছে। ওই গ্রামের বাবুল আক্তার বলেন, দুই মাস ধরে তাঁদের বাড়ির পাশ থেকে বালুভর্তি ট্রাক-ট্রাক্টর যাতায়াত করছে। কাতলাগাড়ি বাজার থেকে একটি সড়ক গড়াই নদ পর্যন্ত গেছে। এই সড়কটি পাশ দিয়ে আরেকটি পাকা রাস্তা তাদের গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে গেছে। এই রাস্তাটিও গ্রামের মাঝ দিয়ে গিয়ে গড়াই নদে মিশেছে। রাস্তাটি দিয়ে বালুভর্তি ট্রাক নদী থেকে উপরে উঠছে। দেখে বোঝা যায় না, এটা পাকা নাকি কাঁচা রাস্তা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ধুলা উড়ছে। বাড়িঘরে বসবাস করা কষ্টকর। অনেক সময় নিজেরাই পানি ছিটিয়ে নেন।

সাগর মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, শৈলকুপা-কাতলাগাড়ি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় যানবাহন ও অসংখ্য মানুষ এই সড়কে চলাচল করে। যারা বর্তমানে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।

ভ্যানচালক বাদল মিয়া জানান, শৈলকুপা শহর থেকে কাতলাগাড়ি ফিরতে অনেক স্থানে দাঁড়াতে হয়েছে। অনেক স্থানে সড়কের ওপর ভ্যান রেখে পাশে গাছের আড়ালে যেতে হয়েছে। এরপরও শরীরটা ধুলায় সাদা হয়ে গেছে। মাসের পর মাস এভাবে ধুলার কষ্ট সহ্য করা কষ্টকর।

কাতলাগাড়ি বাজারের বসে কথা হয় ওই এলাকায় বাসিন্দা জামিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, কাতলাগাড়ি বাজারে জি কে সেচ প্রকল্পের একটি খাল ছিল, যার ওপর ছিল একটি সেতু। সেতুটি পুরোনো হওয়ায় রেলিং ভেঙে পড়েছিল। এবার বালুভর্তি ট্রাক চলায় সেতুটি ধসে পড়ে। বালু ব্যবসায়ীরা তাঁদের সুবিধায় সেতুর জায়গায় নামমাত্র পাইপ বসিয়ে মাটি ভরাট করে নিয়েছে; যা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে।

এ ব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী কাতলাগাড়ি বাজারের বাসিন্দা আনসার আলী বলেন, তিনি জেলা প্রশাসন থেকে বালু তোলার ইজারা নিয়েছেন। প্রতিদিন বালু নিয়ে চার শতাধিক গাড়ি চলাচল করছে। কাতলাগাড়ি-শৈলকুপা সড়ক ছাড়া বালু নেওয়ার আর কোনো সড়ক নেই।

সড়কজুড়ে সারাক্ষণ ধুলো ওড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন
ছবি: প্রথম আলো

লোকজনের সমস্যা ও সড়ক ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে আনসার আলী বলেন, কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর কিছুই করার নেই। তিনি বর্ষার আগপর্যন্ত বালু উত্তোলন করবেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার উদ্দিন বলেন, গ্রামীণ সড়কে বালুভর্তি ভারী ট্রাক বেশি চলাচল করলে সড়ক ভালো রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাঁরা সড়কটি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি দেখেছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতিমা জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও বিব্রত। এটা নিয়ে কী করা যায়, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন।