শৈলকুপায় নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় আরও একজন খুন

নিহত কল্লোল হোসেন খন্দকারের স্বজনদের আহাজারি। শনিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় আরও একজন খুন হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের বগুড়া গ্রামের কল্লোল হোসেন খন্দকারকে (৩৫) প্রতিপক্ষরা মাঠে কাজ করা অবস্থায় হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি ওই গ্রামের আকবার আলীর ছেলে।

এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, কল্লোল বগুড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সমর্থক হওয়ায় প্রতিপক্ষ শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থকেরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবার নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তিনি নির্বাচনে আর অংশ নেননি। এবার এই ইউপিতে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে পঞ্চম ধাপে গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। নির্বাচনের আগে দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে শফিকুল মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, কল্লোল বগুড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সমর্থক হওয়ায় প্রতিপক্ষ শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থকেরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

বগুড়া এলাকার আবদুর রউফ বলেন, আজ সকালে দলিলপুর মাঠে পেঁয়াজের খেতে কাজ করতে যান কল্লোল হোসেন। এ সময় প্রতিপক্ষ শফিকুলের সমর্থকেরা আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে কল্লোলকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যান। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে স্থানীয় মোকাব্বির হোসেনকে প্রতিপক্ষরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছিল। তারই জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, কল্লোল হোসেনের মৃত্যুর খবর পেয়ে শৈলকুপা শহরে অবস্থান করা মোকাব্বির হোসেনকে আরেক দফা মারপিট করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে শুধু নয়, দীর্ঘদিনের বিরোধে এ ঘটনা ঘটেছে, যা নির্বাচনের পর বড় আকার ধারণ করেছে।

আরও পড়ুন

তবে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়া ইউপি নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কল্লোলের প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমানে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শৈলকুপায় সহিংসতায় এ নিয়ে পাঁচজন প্রাণ হারালেন। উপজেলার সারুটিয়া ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩১ ডিসেম্বর নৌকার অফিসে হামলায় নিহত হন হারান আলী, অখিল সরকার ও আবদুর রহিম। ১ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন জসিম উদ্দিন। আজ নতুন করে বগুড়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় কল্লোল হোসেন মারা গেলেন।