শ্বশুর-পুত্রবধূর দ্বন্দ্বে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার লিচু

লিচু তুলতে দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাগান ইজারা নেওয়া দুই চাষি। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মামুদপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে লাল টসটসে লিচু। বাদুড় খেয়ে নষ্ট করছে। পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে যে যার মতো। দেখার যেন কেউ নেই। সময়মতো গাছ থেকে এসব লিচু সংগ্রহ করতে না পারলে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বাগানের মালিক। ঘটনাটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের। শ্বশুর ও পুত্রবধূর মধ্যে বাগানের মালিকানা-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে লিচু।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিচুবাগানগুলোর মালিক মামুদপুর গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী। ২৫ বিঘা জমিতে পাঁচটি বাগানে লিচুগাছ আছে ২২২টি। অসুস্থতার কারণে গ্রাম ছেড়ে তিনি রাজশাহীতে মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। তত্ত্বাবধায়ক মো. সামসুল ইসলাম এসব বাগান দেখভাল করেন।

মো. ইউসুফ আলী অভিযোগ করে বলেন, অসুস্থতার কারণে বাগানগুলো আলম মণ্ডল ও আরমান আলী নামের দুই ব্যক্তির কাছে আট লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছিলেন। তাঁরাই বাগানের গাছগুলো পরিচর্যা করেছেন। শেষ সময়ে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁর ছেলের বউ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিনের লোকদের বাধার কারণে লিচুগুলো সংগ্রহ করতে পারছেন না। থানা-পুলিশকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। এ জন্য গাছেই নষ্ট হচ্ছে লিচুগুলো।

এদিকে বাধা ছাড়া লিচু সংগ্রহের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাগান ইজারা নেওয়া আলম মণ্ডল ও আরমান আলী। আজ শনিবার দুপুরে লিচুবাগানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, বাগানমালিক ইউসুফ আলীর কাছ থেকে ৮ লাখ টাকায় ৫টি বাগান ইজারা নিয়েছেন। বাগানের পরিচর্যাসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের। এখন লিচু সংগ্রহ করতে গেলে জমির মালিকের পুত্রবধূর নিযুক্ত লিটন আহম্মেদ, মুন্না হোসেন ও কামাল হোসেনের বাধায় বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতে পারছেন না তাঁরা। স্থানীয় পুলিশও তাঁদের সহযোগিতা করছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে মুন্না হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই জমির মূল মালিক ইউসুফ আলীর প্রয়াত স্ত্রী। তাঁদের একমাত্র ছেলে প্রয়াত ইউএনও শফিকুল ইসলামের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। ইউএনওর অবর্তমানে তাঁর দুই সন্তান বর্তমান মালিক (মৃত দাদির সম্পত্তি)। এ জন্য প্রয়াত ইউএনওর স্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদা পারভিনের নির্দেশে ইজারাগ্রহীতাদের লিচু সংগ্রহে বাধা দিচ্ছেন তাঁরা।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শাশুড়ির মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলামের নাবালক দুই সন্তান। তাঁদের ভবিষ্যৎ ভেবেই বাগানসহ জমিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করায় এলাকার কিছু লোককে এ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, এখন পর্যন্ত সব সম্পত্তির মালিক তিনি। অসুস্থতার কারণে বর্তমানে তিনি রাজশাহীতে আছেন। এ সুযোগে ছেলের বউ নাবালক সন্তানদের পক্ষে জমির দখল দাবি করছেন। সেটা আইন ও নিয়মবহির্ভূত।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মতিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুর ও ছেলের বউয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলমান। তবে লিচু সংগ্রহ নিয়ে কোনো পক্ষই তাঁর কাছে অভিযোগ দেয়নি।