শ্বাসকষ্টের রোগীর বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবীদের অক্সিজেন

২০০৫ সালে ঢাকায় মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েব নামে সেবামূলক ছাত্রসংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়।

মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর বাড়িতে যাচ্ছেন মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েবের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে উপজেলার সুবিদখালী কলেজ রোড এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী গ্রামের শাহীন আলমের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তাঁর বাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গভীর রাতে তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। একজনের কথামতো মুঠোফোনে কল করতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হন কয়েকজন তরুণ।

সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হওয়ার পর আরেকটি অক্সিজেনপূর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে আসেন তরুণেরা। কয়েক দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন শাহীন। শনিবার দ্বিতীয়বার তাঁর নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ এসেছে।

গতকাল শনিবার কথা হয় শাহীন আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সময়মতো অক্সিজেন না পেলে আমার অবস্থা খারাপ হতে পারত। এমন সহযোগিতার জন্য আমি সংগঠনটির কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে আমি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। একদিন গভীর রাতে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। সে সময় আমার স্বজনেরা মুঠোফোনে মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েব নামে একটি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা ওই রাতেই আমার বাড়িতে অক্সিজেন সেবা দেন।’

শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের মুন্সিরহাট গ্রামে শ্বাসকষ্টে ভোগা মো. আলতাফ হাওলাদারের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন ওই সংগঠনের সদস্যরা। মুঠোফোনে কল করতেই শাহীন আলম ছাড়াও কাকড়াবুনিয়া গ্রামের জোবায়দা আক্তার, সুলতানাবাদ গ্রামের তানজিলা বেগম ও আলতাফ হাওলাদারের মতো শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের বাড়িতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েব নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের এই সময়ে এমন মানবিক উদ্যোগ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ঢাকায় মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েব নামে সেবামূলক ছাত্রসংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে সংগঠনের কার্যক্রম ছিল শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। মির্জাগঞ্জের গরিব, মেধাবী যে শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করতেন, তাঁদের সহযোগিতা করত সংগঠনটি। পরে তারা মির্জাগঞ্জে বিভিন্ন দুর্যোগের সময় সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসে।

মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েবের সভাপতি ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ২০ জন রোগীর বাড়িতে গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিতে পেরেছি। আমাদের ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। অক্সিজেন শেষ হলে আবার পূর্ণ করে রোগীদের সেবা দিই। মির্জাগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েবের কমিটিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬০ জন শিক্ষার্থী আছেন। উপদেষ্টা কমিটির বিত্তবান সদস্যরা সেবামূলক নানা কাজে অর্থায়ন করে থাকেন।’

শুধু অক্সিজেন–সংকটেই নয়, যেকোনো দুর্যোগকালে মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে যায় অরাজনৈতিক এই ছাত্রসংগঠন। গত বছর করোনার সংক্রমণের শুরুর দিকে উপজেলার কর্মহীন তিন হাজার পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া পবিত্র রমজানে উপজেলার সব মসজিদের ইমাম–মুয়াজ্জিনের পরিবারকে খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেয় তারা। করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য যুক্তরাষ্টপ্রবাসী হাবিব রায়হান, মাহবুবুর রহমান ও দিলরুবা কলির আর্থিক সহযোগিতায় খোলা হয় ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক।