শ্যালিকাকে ধর্ষণ–হত্যার দায়ে ভগ্নিপতির যাবজ্জীবন

হাইকোর্টফাইল ছবি

নড়াইলে শ্যালিকাকে ধর্ষণ–হত্যার ঘটনায় দুই দশক আগে করা মামলায় ভগ্নিপতি আউয়াল ফকিরকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আউয়ালের করা জেল আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আজ বুধবার এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে আউয়ালের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, যা হাইকোর্ট বহাল রেখেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আউয়ালের করা জেল আপিলের শুনানি শেষে ২৬ আগস্ট আপিল বিভাগ ২ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য দিন রাখেন। আজ সকালে রায় ঘোষণা করা হয়।

আদালতে আউয়াল ফকিরের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন এ বি এম বায়েজীদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

পরে আইনজীবী এ বি এম বায়েজীদ প্রথম আলোকে বলেন, আউয়ালের জেল আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ধর্ষণের কারণে হত্যার দায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৬(২) ধারায় হাইকোর্ট আউয়ালের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ ওই আইনের ৬(১) ধারায় ধর্ষণের দায়ে আউয়ালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

আইনজীবীর তথ্যমতে, ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে রেহানা বেগম (১৫) তার বোনের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। মির্জাপুর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে একই উপজেলার সীতারামপুর গ্রামে রেহেনার বাড়ি। বিষপানের কারণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন রাতে রেহানা মারা যায়। এ ঘটনার অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা করেন কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক। পরে নিহত কিশোরীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে ধর্ষণের কারণে হত্যার অভিযোগে ২০০০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কালিয়া থানায় মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩০ মার্চ রেহেনার ভগ্নিপতি আউয়াল ফকিরের (৩৫) বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল বিচারিক আদালতের এক আদেশে উল্লেখ করা হয়, আউয়াল ফকির জেলহাজতে। এ হিসাবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন আউয়াল।

আইনজীবীর ভাষ্যমতে, ওই মামলায় ২০০১ সালের ২৯ মার্চ রায় দেন নড়াইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত। রায়ে আউয়ালকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এরপর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল-জেল আপিলের ওপর ২০০৩ সালের ৭ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আউয়ালের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থেকে ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ জেল আপিল করেন আউয়াল। এরপর ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করার অনুমতি পান। এর ধারাবাহিকতায় গত মাসে জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়। এই মামলায় আউয়াল ফকিরের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে ২০০৪ সালে নিয়োগ পান বলে জানান আইনজীবী এ বি এম বায়েজীদ।