শ্রীপুরে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

মসজিদের ইমাম ও খতিবকে জুতা দিয়ে মারধর করায় আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা। চকপাড়া গ্রাম, শ্রীপুর, গাজীপুর, ১৮ ডিসেম্বর
ছবি: সাদিক মৃধা

মসজিদের ইমাম ও খতিবকে জুতা দিয়ে মারধর করায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল হয়।

সকাল থেকেই শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ থেকে ইমাম-মুসল্লিরা এসে চকপাড়া গ্রামে জড়ো হতে থাকেন। মারধরের ঘটনায় সোমবার প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় সালিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ ইমাম মুসল্লি ও স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম (৩৫) ওই গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে তিনি মাওনা ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৫ জানুয়ারি রাত ১১টায় মারধরের ঘটনা ঘটে। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু সায়েম। মারধরের শিকার মুফতি আবদুল মজিদ মাওনা ইউনিয়নের উত্তর চকপাড়া বায়তুন নুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব। এ ছাড়া তিনি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

অভিযোগকারী আবু সায়েম সোমবার প্রথম আলোকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ১৫ জানুয়ারি রাতে স্থানীয় হায়াত আলী নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে মিলাদের অনুষ্ঠানের গরু জবাই করার জন্য ওই ইমামকে ডাকতে কয়েকজনকে তাঁর ভাড়া বাড়িতে পাঠানো হয়। মসজিদের ইমাম ওই গ্রামের মো. স্বপনের বাড়িতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন। একই বাড়িতে স্ত্রীসহ ভাড়া থাকেন ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। ইমামকে ডাকতে পাঠানো লোকজন বাড়ির প্রধান ফটকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও ইমাম সাহেব শুনতে পাননি। এতে বিরক্ত হয়ে রফিকুল ইসলাম তাঁর ঘর থেকে বের হয়ে ইমামের থাকার ঘরের সামনে গিয়ে ইমামকে গালিগালাজ করা শুরু করেন। তাঁকে বের হতে বলেন। এতক্ষণ ডাকাডাকি করার পরও কেন তিনি শুনতে পাননি, তার কারণ জিজ্ঞাস করেন। তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রফিকুল তাঁর নিজের পা থেকে জুতা খুলে ইমামকে মারধর করতে থাকেন। ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন দেখতে পেয়ে মসজিদ কমিটিকে জানান।

এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় মুসল্লিরা রফিকুলের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন। সেদিন শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় সোমবার সালিসের মাধ্যমে এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার করা হবে, এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু সোমবার কোনো সালিস না হওয়ায় বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।

অভিযুক্ত রফিকুল সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ইমাম সাহেবকে মারিনি। কথা–কাটাকাটি হয়েছে। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। ইমাম সাহেবের সঙ্গে আমার মিটমাট হয়ে গেছে। আমি ক্ষমা চেয়েছি। আমার বিরোধী গ্রুপ আমার মান–সম্মান নষ্ট করতে একটা মিটমাট হওয়া বিষয় নিয়ে লোকজনকে উসকানি দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটির কথা আমি শুনেছি। বিস্তারিত জানি না এখনো। তবে তিনি যদি সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।