শ্রীমঙ্গলে পর্যটনশিল্পে ধস, প্রণোদনা দাবি

করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে ফাঁকা পড়ে ছিল শ্রীমঙ্গলের সব রিসোর্ট। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেগুলো খুলতে শুরু করেছেসংগৃহীত

করোনা মহামারির কারণে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পর্যটনশিল্প। হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ থাকায় এগুলো থেকে আয় হওয়ার বদলে উল্টো দেখভাল করতে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল-রিসোর্ট বানানো ব্যবসায়ীরা এখন কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে বেতন দিতে না পেরে কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। এ অবস্থায় হোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি উঠেছে।

করোনার সংক্রমণ রোধে এ বছরের ১৮ মার্চ শ্রীমঙ্গলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. নজরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর শ্রীমঙ্গলের সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। চলতি মাসের শুরু থেকে হোটেল-রিসোর্টগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কক্ষ ভাড়া দিচ্ছে। তবে পর্যটক খুব কম আসায় হাতে গোনা কয়েকটি হোটেল-রিসোর্ট কক্ষ ভাড়া দিতে পারছে।

বিভিন্ন হোটেল–রিসোর্ট বন্ধ থাকায় বাইরে ঘুরতে বেড়িয়েছেন দর্শনার্থীরা। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের কাশফুল বালুচর এলাকায়
প্রথম আলো

রাধানগর এলাকার ‘এসকেডি আমার বাড়ি’ রিসোর্টের মালিক সজল কুমার দাশ বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা করোনার কারণে রিসোর্ট বন্ধ রেখেছি। রিসোর্ট থেকে সাড়ে পাঁচ মাস ধরে আমাদের কোনো আয় হচ্ছে না। কিন্তু পরিচালনায় তো খরচ বন্ধ নেই। ব্যাংকের সুদ, ভূমির ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল তো দিতেই হচ্ছে। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কেউ কেউ পেশা বদলেছেন। এ অবস্থায় বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিল আমাদের আরও বেকায়দায় ফেলেছে।’

সজল কুমার আরও বলেন, ‘রিসোর্টের সবকিছু বন্ধ করে বসে আছি। তবু বিদ্যুতের বিল আসছে আগের মতোই। এটা আমাদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। সব মিলিয়ে আমরা একটা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রিসোর্টের ব্যবসা চালিয়ে যেতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটনসেবা সংস্থার সদস্য ও গ্রিন লিফ হোটেল অ্যান্ড ইকো ট্যুরিজমের মালিক এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে হোটেল-রিসোর্ট বানিয়েছি। বেশির ভাগই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল-রিসোর্ট করেছেন। দেশের পর্যটনশিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’

করোনার কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন জায়গা। সম্প্রতি বধ্যভূমি ৭১–এ
প্রথম আলো

সংস্থাটির আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য ৬৮টি হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। এগুলো থেকে কোনো আয় নেই, উল্টো হোটেল-রিসোর্টগুলোর দেখভালে খরচ করতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। করোনা পরিস্থিতির আগে আমাদের শ্রীমঙ্গলের সব হোটেল-রিসোর্ট মিলে কক্ষভাড়া থেকে আসত দৈনিক এক কোটি টাকা। কিন্তু করোনার জন্য আমরা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ রেখেছি। প্রতিদিন আমাদের অনেক টাকা লোকসান হচ্ছে।’

আবু সিদ্দিক মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের হোটেল-রিসোর্টের মালিকদের বেশির ভাগেরই ব্যাংকঋণ রয়েছে। সেই ঋণের কিস্তি দিতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে সবার। এ অবস্থায় সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, এ পর্যটনশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক। এতে কিছুটা হলেও আমরা আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’