সংকট দেখিয়ে পঞ্চগড়ে বেশি দামে টিএসপি সার বিক্রি

পঞ্চগড়ে সংকট দেখিয়ে বেশি দামে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। কৃষকেরা বলছেন, প্রতি বস্তা টিএসপিতে অন্তত ২৬০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

ডিলারদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম ও ঈদের ছুটিতে পরিবহন সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে সার আনা যায়নি। তাই বাজারে সারের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সরকারনির্ধারিত দামে টিএসপি বিক্রি করছেন তাঁরা। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এ মুহূর্তে সারের সংকট নেই।

কৃষকেরা বলছেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার বের করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কিছু কিছু ডিলার দোকানে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। এমনকি রসিদ চাইলেও দিচ্ছেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ১০০, ইউরিয়া ৮০০, ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ৮০০ ও এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে শুধু জুলাই মাসে জেলায় ৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন টিএসপি সারের চাহিদার বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ ১ হাজার ৮৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ৮৪৪ মেট্রিক টন। একইভাবে ৩ হাজার ৬৬ মেট্রিক টন ডিএপি সারের চাহিদার বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ ১ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ১ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ৪ হাজার ৯৪৯ মেট্রিক টন এমওপি সারের চাহিদার বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ ১ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ১ হাজার ৮১ মেট্রিক টন। আর ৬ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ ৩ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন। ডিলাররা উত্তোলন করেছেন ২ হাজার ৪৯১ মেট্রিক টন। জেলার ৪৭ জন বিসিআইসি ডিলার এবং ১৬০ জন বিএডিসির ডিলারের মাধ্যমে এসব সার বিক্রি করা হচ্ছে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৯৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ শতাংশ আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় ১৬০ মেট্রিক টন টিএসপি, ২০৩ মেট্রিক টন ডিএপি, ৪২৭ মেট্রিক টন এমওপি ও ১ হাজার ১০ মেট্রিক টন ইউরিয়া মজুত ছিল।

পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকার কৃষক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার পঞ্চগড় শহরের এক ডিলারের দোকানে এক বস্তা টিএসপি ও এক বস্তা পটাশ কিনতে যাই। প্রথমে তাঁরা আমাকে টিএসপি সার নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলার পর তাঁরা আমাকে দুই বস্তা সার দেন। তবে দুই বস্তার দাম নেন ২ হাজার ১১০ টাকা। পটাশের দাম ৭৫০ টাকা হলে টিএসপির দাম পড়েছে ১ হাজার ৩৬০ টাকা। তবে আমাকে তাঁরা কোনো রসিদ দেননি।’

মামুনুর রসিদ নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমরা আমন চাষ নিয়ে খুব দুর্ভোগে পড়েছি। টিএসপি সার দিতে পারছি না।’

সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকার কৃষক মুকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় রজলী বাজারে ১০ কেজি টিএসপি সার কিনেছি ৩০ টাকা কেজি দরে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সার ব্যবসায়ী বলেন, ‘অনেক সময় ডিলারদের কাছ থেকে আমাদের বাকিতে মাল আনতে হয়। এ জন্য বেশি দাম নিলেও তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলতে পারি না।’

বিসিআইসির ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও পঞ্চগড় জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হান্নান শেখ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদের ছুটির পর পর্যাপ্ত যানবাহন না পাওয়ায় বাজারে সারের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে কারও কাছ থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে না। তবে সংকট দ্রুত কেটে যাবে।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারনির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রির জন্য আমাদের তদারকি অব্যাহত রয়েছে। তবে কৃষকদের শুধু টিএসপি সারের প্রতি না ঝুঁকে আমরা ডিএপি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। কেউ যদি সারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’