সংরক্ষিত বন, বিদ্যালয়ের পাশে করাতকল

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের মানিক সিংহ বাজারে স্থাপিত এই করাতকলের কয়েক গজ দূরেই একটি স্কুল। সংরক্ষিত বনের সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে এই করাতকলপ্রথম আলো

করাতকলের কাছাকাছি তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটু দূরেই সংরক্ষিত বন। বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কোনো অনুমতিপত্র নেই। এভাবে করাতকল বিধিমালার তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
করাতকলটি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের মানিক সিংহ বাজার এলাকায় পড়েছে। এটির কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি সম্প্রতি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ খান ২০১২ সালে মানিক সিংহ বাজারে করাতকলটি স্থাপন করেন। তিন বছর পর ২০১৫ সালে বন বিভাগের জুড়ী কার্যালয়ের তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান করাতকলটি পরিদর্শন করেন।

অভিযোগ ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ খান ২০১২ সালে মানিক সিংহ বাজারে করাতকলটি স্থাপন করেন। তিন বছর পর ২০১৫ সালে বন বিভাগের জুড়ী কার্যালয়ের তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান করাতকলটি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি আবদুল লতিফ খানকে দেওয়া চিঠিতে বলেন, করাতকল থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে পূর্ব গোগালী সংরক্ষিত বন। ২০১২ সালের করাতকল বিধিমালা(লাইসেন্স) অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তাই করাতকলটি অবৈধ। এটি পরিচালনায় অনুমতিপত্র প্রদান করা যাবে না। এ ছাড়া করাতকলটি বন্ধের জন্য মালিককে বলা হয়। কিন্তু মালিক বিষয়টি আমলে নেননি।

এ অবস্থায় গত ১৯ আগস্ট হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা লুজু খান সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে দেন। তিনি বলেন, ওই করাতকলের ১০০ মিটারের মধ্যে মানিক সিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয় এবং জায়ফরনগর ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা পড়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ২০১২ সালের করাতকল বিধিমালায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বা বিঘ্ন সৃষ্টি করে—এ রকম কোনো স্থানের ন্যূনতম ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।

করাতকলের মালিক আবদুল লতিফ খান বলেন, লুজু খান তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে। পূর্ববিরোধের জেরে তিনি (লুজু) তাঁর বিরুদ্ধে লেগেছেন। করাতকলটি বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

অভিযোগ পাওয়ার পর সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তের জন্য শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষককে দায়িত্ব দেন। ২০ অক্টোবর সহকারী বন সংরক্ষক জি এম আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। করাতকলটি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।