সংস্কার না হওয়ায় বেহাল নওগাঁ-বদলগাছী সড়ক

বালু, ইট ও পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কটির অধিকাংশ স্থান দেবে গেছে। আবার কোথাও তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। এতে ভোগান্তি হচ্ছে।

অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাকসহ ভারী যান চলাচলে নওগাঁ-বদলগাছি সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। কোথাও পিচ–খোয়া উঠে গেছে। কোথাও গর্ত হয়ে আছে। সম্প্রতি বদলগাছির চাংলা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সংস্কারের অভাবে নওগাঁ-বদলগাছী সড়ক বেহাল হয়ে আছে। পিচ উঠে সড়কটির অসংখ্য স্থানে ভাঙাচোরা, খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনার পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।

বালু, ইট ও পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কটির অধিকাংশ স্থান দেবে গেছে। আবার কোথাও তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দ ও গর্তের সংখ্যা বেড়ে সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে গর্ত ও খানাখন্দে জমা পানিতে এবং শুষ্ক সময়ে ধুলাবালুর দুর্ভোগের মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ থেকে বদলগাছী উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ করা হয়। নওগাঁ থেকে এই সড়ক দিয়েই বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যেতে হয়। এ ছাড়া নওগাঁ পত্নীতলা, সাপাহার ও ধামইরহাট উপজেলাবাসীর চলাচলের প্রধান রাস্তা এটি। রাস্তাটি ২২ টনের বেশি যান চলাচলের উপযোগী নয়, কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ টন ওজনের পণ্যবাহী যানও চলাচল করছে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটির ১৮ কিলোমিটারজুড়েই অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। রাস্তাটির বেশ কিছু স্থানে দেবে গিয়ে এবং পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে ভারী পণ্যবাহী ট্রাক প্রায়ই আটকে যাচ্ছে। কোথাও রাস্তায় উঁচু ঢিবি তৈরি হয়েছে। পাহাড়পুর বাজার, কীর্ত্তিপুরবাজার, বালুভরা, খলসী মোড়, চাংলা, বদলগাছী খাদ্যগুদাম মোড়, হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকার বাসিন্দা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগেই সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়। এরপর মাঝেমধ্যে গর্ত ভরাটকাজ ছাড়া সড়কটিতে তেমন কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। ফলে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দের কারণে প্রায়ই অটোরিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

সম্প্রতি দুপুরে নওগাঁ-বদলগাছী সড়কের চাংলা এলাকায় দেখা যায়, একটি বালুবাহী ট্রাক রাস্তার গর্তে আটকা পড়েছে। ট্রাকটি সেখানে আটকা পড়ায় সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। গর্তে আটকা পড়া ওই ট্রাকের চালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে কাঁচা মাটি বের হয়ে পড়েছে। এর ফলে ট্রাকের চাকা দেবে গেছে। এখন বারবার চেষ্টা করেও গাড়ি আর তুলতে পারছি না। বালুসহ ট্রাকের ওজন ৩০ টনের ওপরে হবে। এখন মনে হচ্ছে এই ট্রাক গর্ত থেকে তোলার জন্য ট্রাকের বালু নামিয়ে ফেলতে হবে।’

আদ্‌-দ্বীন পরিবহনের বাসের চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা রাস্তায় গর্ত আর ভাঙাচোরা। রাস্তার এই অবস্থার কারণে আগে যেখানে নওগাঁ থেকে বদলগাছী যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগত, এখন সেখানে ৫০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগতেছে। খানাখন্দের কারণে গাড়ি প্রচুর ঝাঁকুনি খায়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে শরীর বিষের মতো ব্যথা হইয়া যায়।’

এ বিষয়ে নওগাঁ সওজ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, এই আঞ্চলিক সড়কে ছয় চাকার পণ্যবাহী ট্রাকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা (গাড়ির ওজনসহ) ১৫ টন এবং ১০ চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২২ টন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে, ট্রাকগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করছে। পণ্যসহ কোনো কোনো ট্রাকের ওজন ৩০ থেকে ৪০ টনের ওজন হয়ে পড়ে। ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। নওগাঁ-বদলগাছী সড়কটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারী পণ্যবাহী ট্রাক। অধিকাংশ ট্রাকই বালুবাহী।

সাজেদুর রহমান আরও বলেন, সড়কটিসহ নওগাঁর পাঁচটি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে আপাতত গাড়ির চাকা যাতে চলতে পারে, সে জন্য রাস্তাটির বেশি খারাপ অংশে ইট-খোয়া ফেলা হবে। খুব দ্রুতই সড়কটিতে সাময়িক এই সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।