সকালে নমুনা দিয়ে ভোজসভায় মেয়র, রাতে করোনা শনাক্ত
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বৃহস্পতিবার সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এরপর দুজনই দুপুরে ভোজ ও বিকেলে সভায় অংশ নেন। রাতে তাঁদের করোনা ‘পজিটিভ’ এসেছে।
এ অবস্থায় ওই ভোজ ও সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। তাঁরা বলছেন, করোনার নমুনা জমা দিলেই আলাদা থাকাটা নিয়ম। এরপরও দায়িত্বশীল পদে থেকে মেয়র ও প্রকৌশলীর এমন অসচেতন আচরণ করা ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে বিচ্ছিন্ন থাকার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে এসব বলে আসছি। তবে এগুলো অনেকেই মানছেন না। এতে সংক্রমণ আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে বিচ্ছিন্ন থাকার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে এসব বলে আসছি। তবে এগুলো অনেকেই মানছেন না। এতে সংক্রমণ আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে করোনার নমুনা জমা দিয়ে নগর ভবনে যান মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী। সেখানে তাঁরা দৈনন্দিন কাজে অংশ নেন। দুপুরে আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আহ্বানে নগরের দরগাহ গেট এলাকার একটি হোটেলে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তাঁরা।
এতে সিটি করপোরেশন ও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে নগর ভবনে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ‘সিলেট নগরীর উন্নয়ন প্রকল্প’ উপস্থাপন অনুষ্ঠানেও অংশ নেন মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী।
দুপুরের ভোজে মেয়রের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদও অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না মেয়র করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে এসেছেন। তাঁর অবশ্যই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া উচিত হয়নি। আমাদের সবাইকে তিনি ঝুঁকিতে ফেলে দিলেন। দায়িত্বশীল মানুষেরা যদি সচেতন না হই, তাহলে সাধারণ জনগণ কীভাবে হবেন।’
দায়িত্বশীল মানুষেরা যদি সচেতন না হই, তাহলে সাধারণ জনগণ কীভাবে হবেন।
বিকেলের অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আজিজ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আনম মনছুফ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রমজানুল হক, পরিচালক ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা তানভীরুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
ওই সভায় অংশ নেওয়া তিনজন বলেন, সভায় ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। একজনের সঙ্গে আরেকজন গা ঘেঁষে বসেন। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলীর করোনা শনাক্তের খবর শুনে আমি নিজেই শঙ্কিত। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের সঙ্গে আমি সভায় ছিলাম। সেখানে একসঙ্গে দুপুরের খাবারও খেয়েছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ দুপুরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোন নম্বরে দুবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। বিকেলে আরেকবার কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
এখন তাঁরা বাসায় আইসোলেশনে থাকার পাশাপাশি চিকিৎসাধীন আছেন।
জানতে চাইলে আজ সকালে প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর-সর্দি থাকায় তাঁরা সকালে একসঙ্গে নমুনা জমা দেন। রাত নয়টার দিকে জানতে পারেন, তাঁদের ফল পজিটিভ এসেছে।
নমুনা দিয়েও সভায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর আজিজুর এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, এখন তাঁরা বাসায় আইসোলেশনে থাকার পাশাপাশি চিকিৎসাধীন আছেন।