সখীপুরে বাদীর মাথার চুল কেটে মুখে কালি, কিশোর গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বাদীর মাথার চুল কেটে মুখে কালি মাখানোর অভিযোগে হওয়া মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আসামি একজন কিশোর (১৬)। কিশোরের বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার তাঁকে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক কিশোর ২০২০ সালের মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়নি।
বাদী একজন তরুণ (১৯)। তিনি ঢাকার একটি সংগঠনের নৃত্যশিল্পী এবং টাঙ্গাইলের স্থানীয় একটি বয়েজ ক্লাবের সদস্য।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় লোকাল বয়েজ ক্লাব ও স্টার বয়েজ ক্লাবের নামে দুটি ক্লাবের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই তরুণ লোকাল বয়েজ ক্লাবের সদস্য। গত ৬ আগস্ট ওই তরুণকে প্রতিপক্ষ স্টার বয়েজ ক্লাবের সদস্যরা জোর করে ধরে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা ওই তরুণকে মারধর করেন এবং বিবস্ত্র করে নাচতে বাধ্য করেন। বিবস্ত্র অবস্থায় নাচের সেই দৃশ্য তাঁরা ভিডিও করেন এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় ৮ আগস্ট ওই তরুণ সখীপুর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে স্টার বয়েজ ক্লাবের ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি শরীফুল ইসলাম ওরফে কালা শরীফ (২২)। গতকাল গ্রেপ্তার কিশোরও ওই মামলার অন্যতম আসামি।

তরুণের মামলায় ৮ আগস্ট রাতে প্রিন্স মাহমুদ (২০) ও মামুন (১৮) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক আসামি মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। পুলিশ বিবস্ত্র করে তরুণকে নাচতে বাধ্য করার ভিডিওটি জব্দ করেছে।

ওই তরুণ অভিযোগ করেন, তাঁর ওই মামলাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে পাঁচজন মুখোশধারী ব্যক্তি বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে একটি বনের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে আগের মামলার প্রধান আসামি শরীফুল ইসলাম, ওই কিশোরসহ চারজন অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে ওই তরুণকে তাঁরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন। কিন্তু মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ওই তরুণের মাথার চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেন। ওই ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলা করেন। দ্বিতীয় মামলায় আগের দুই মামলার আসামি শরীফুল ইসলাম ও কিশোরকেও আসামি করা হয়েছে।

‘মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদীর মুখে কালি মাখানোর অভিযোগ’ শিরোনামে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোর অনলাইনে ও আজ শনিবার প্রিন্টে খবর প্রচার হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, তরুণের চুল কেটে মুখে কালি মাখানোর ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই।

সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরকে দুই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার কিশোরের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আসামি কিশোর হওয়ায় তার রিমান্ড মঞ্জুর না হলে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশও দিতে পারেন আদালত। আজ বিকেলে তা জানা যাবে।