সদ্য বিদায়ী ভিসির ‘অনিয়ম’ তদন্তে কমিটির সদস্যরা রাবিতে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন
প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ, তার তদন্তকাজ করতে রাজশাহীতে এসেছে তদন্ত দল।

আজ শনিবার আকাশপথে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঢাকা থেকে রাজশাহীর শাহমখদুম বিমানবন্দরে নামেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে তাঁরা ক্যাম্পাসে যান। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে উপাচার্য কার্যালয়ে যান। তাঁদের সঙ্গ আছেন সঙ্গে আছেন উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পাওয়া সহ–উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আজিজুর রহমান তদন্ত দল আসার কথা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীরসহ তদন্ত দলের চার সদস্য এসেছেন।

এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাকির হোসেন আখন্দ এবং সদস্যসচিব ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান। গতকাল এই কমিটি করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এই কমিটি অবৈধ নিয়োগ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে।

কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যেই ইউজিসি তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ কার্যক্রমসহ আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিতও হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে উপাচার্যকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করে উপাচার্য তাঁর মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ করেছেন বলে মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য তাঁর শেষ কর্মদিবসে বিভিন্ন পদে ১৪১ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে (এডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এই মেয়াদে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, নীতিমালা শিথিল করে এবং অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাঁর মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। উপাচার্যের বাসভবনে ওঠার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বাসা দখলে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। ইউজিসির তদন্তেই এসব অভিযোগের সত্যতা মেলার পর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য গত ডিসেম্বর মাসে ১২টি পৃথক নোটিশ দিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

এর সামান্য কিছু ব্যবস্থা হলেও মোটাদাগে বড় অভিযোগগুলোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং শেষ দিনেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে তিনি ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেলেন তিনি। এ নিয়োগ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কর্মচারীদের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।