সন্তান জন্ম দিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী, দত্তক নিতে চান অনেকে

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেওয়া নবজাতক
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফে ভবঘুরে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক কন্যাশিশু। শনিবার দিবাগত রাত দুইটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল জানিয়েছেন, মা ও নবজাতক বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠছেন। টেকনাফে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানসিক রোগীদের তহবিল’ (মারোত)–এর নেতারা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করছেন।

মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, উপজেলার বাহারছড়ার শিলখালী এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। সবাই তাঁকে ‘পাগলি’ বলেই চেনে। এর মধ্যে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। শনিবার রাতে প্রসব বেদনা দেখে ওই এলাকার চৌকিদার শহিদ উল্লাহ বিষয়টি টেকনাফ থানা–পুলিশে খবর দেন। এরপর থানা থেকে মারোতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

আবু সুফিয়ান বলেন, রাত আনুমানিক ১টা ৪০ মিনিটে ওই নারী একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান প্রসব করেন। মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন। তবে শিশুর বাবা কে, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। এ শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মারোতের সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে মুঠোফোন ও সশরীর অনেকেই যোগাযোগ করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স হেনা পারভীন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন। সন্তান জন্মের পর মায়ের পাশে দেওয়া হলে ওই নারী মেয়েকে আদর করেন। পরবর্তী সময়ে সন্তানের জন্য তাঁর কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। শিশুটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে একটু দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। মাকে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর পরিচর্যায় দুজন সেবিকা নিয়োজিত রয়েছেন।

মারোতের প্রধান উপদেষ্টা ও টেকনাফ সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল বলেন, ‘কোন সভ্য সমাজে আমরা বাস করছি, যেখানে একজন মানসিক রোগীও বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। অসুস্থ মস্তিষ্কের অরুচিকর এই মানুষগুলোর জন্যই সমাজ এখনো পিছিয়ে আছে। জঘন্য এই কর্মকাণ্ড থেকে জাতিকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে।’