সন্ধ্যা নামতেই পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় মেলার আমেজ

পদ্মা সেতুর নাওডোবা টোলপ্লাজার সামনে গভীর রাতেও ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

দিন গড়িয়ে বিকেল হয়। সন্ধ্যা শেষে নামে রাত। সব সময়ই পদ্মা সেতু দেখতে আসছে মানুষ। রাত যত গভীর হয়, মানুষের সমাগমও তত বাড়তে থাকে। সেতুতে ঘোরাঘুরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানুষ টোল প্লাজা ও আশপাশের সড়কে ভিড়ি করছে। সন্ধ্যার পর রীতিমতো মেলার আবহ সৃষ্টি হচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়।

২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেতুর নির্মাণকাজ দেখতে ভিড় করত নাওডোবায়। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তখন কেউ কাছে যেতে পারত না। ২০১৭ সালে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যায়। ওই এলাকায় নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনায়ন করা হয়। তখন সংযোগ সড়কে নিয়মিত ঘুরতে আসত লোকজন।

২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ ছুটে আসছে পদ্মা সেতু অভিমুখে। তারা ব্যক্তিগত ও ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতু পারাপার হচ্ছে। এরপর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় টোল প্লাজায় নামছে, ঘুরছে, সময় কাটাচ্ছে।

টোল প্লাজার পাশে নির্মাণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল। এর পাশে দৃষ্টিনন্দন ইলিশের ভাস্কর্য ও ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু দেখতে আসা মানুষ দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওই সব স্থাপনা দেখছে, ছবি তুলছে।

নাওডোবা টোলপ্লাজা এলাকায় রীতিমতো মেলা বসেছে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নাওডোবা টোল প্লাজায় গিয়ে দেখা যায় টোল প্লাজা, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানা ও নাওডোবা সড়কে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের সমাগম। সেখানে অস্থায়ীভাবে নানা ধরনের খাবারের দোকান ও শিশুদের খেলনার দোকান বসানো হয়েছে। কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করছেন। মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও মোটরসাইকেলে ওই স্থানে আসছে। কেউ ঘুরে চলে যাচ্ছে, আবার কেউ আসছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতুতে উঠে মাওয়া প্রান্তে গিয়েছেন। আবার মাওয়া প্রান্ত থেকে নাওডোবায় এসে টোল প্লাজায় সময় কাটিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বোন শেখ হাসিনার অদম্য সাহসে পদ্মার বুকে সেতু হয়েছে, এ জন্য আমরা গর্বিত। উদ্বোধনের দিন আমি একা এসেছিলাম। আজ পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের নিয়ে এসেছি।’

আরও পড়ুন

মাদারীপুর সদরের কলাগাছিয়া এলাকার বাসুদেব বিশ্বাস আত্মীয়স্বজন মিলে ৩৫ জনের একটি দল নিয়ে বাসে করে এসেছেন। তাঁরা পদ্মা সেতু ঘুরে দেখে সারা দিন নাওডোবায় সময় কাটিয়েছেন। বাসুদেব প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ মিনিটে পদ্মা সেতু ঘোরা শেষ। এরপর নাওডোবায় সেতুসংশ্লিষ্ট সব অবকাঠামো ঘুরে দেখেছেন। সন্ধ্যায় বাঁধে সময় কাটিয়েছেন। রাতে সেতুর আলো দেখার জন্য টোল প্লাজায় এসেছেন।

আরও পড়ুন

বরিশাল শহরের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘রাতের আলোকিত সেতু দেখব বলে এসেছি। সেতুর ল্যাম্পপোস্টের জ্বালানো আলো পদ্মার পানিতে গিয়ে মোহনীয় এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছ। তা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু দেখতে আসা মানুষ সকাল থেকেই টোল প্লাজার আশপাশে ভিড় করছে। গভীর রাত পর্যন্ত থাকছে। এ এলাকায় রীতিমতো মেলা বসেছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে।