বগুড়ার মোকামে সব সবজির দাম কমেছে

কৃষকেরা বলছেন, দাম বেশি কমে গেলে সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

সবজির অন্যতম পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাটে গত বুধবার ১ কেজি মুলা বিক্রি করে কৃষক দাম পেয়েছিলেন ১২ টাকা। এই হাটে গতকাল সোমবার এক কেজি মুলা বিক্রি হয়েছে তিন টাকায়। চার দিনের ব্যবধানে মুলার দাম কমেছে চার গুণ।

শুধু মুলা নয়, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। তবে অন্যবার এ সময় বাজারে নতুন আলুর ব্যাপক সরবরাহ থাকলেও এবার এখনো আলুর দেখা নেই।

এদিকে শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই সব সবজির দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তাঁরা বলছেন, দাম এত কমে গেলে সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

হাটের বিক্রেতা ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার খেত থেকে তুলে আনা এক কেজি মুলা বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন তিন টাকা। এক সপ্তাহ আগে হাটে পাইকারি পর্যায়ে মুলার দাম ছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা। গড়ে দেড় কেজি ওজনের বাঁধাকপি বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন ১৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ১ কেজি ওজনের বাঁধাকপির পাইকারি পর্যায়ে দাম ছিল ৩৫ টাকা। এ ছাড়া ১ কেজি ওজনের একটি ফুলকপি বিক্রি করে কৃষক দাম পেয়েছেন ১২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ১ কেজি ওজনের ফুলকপির দাম ছিল ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা।

একইভাবে গতকাল প্রতি কেজি শিম ৬০ টাকা থেকে কমে ৩০, বেগুন ৩০ টাকা থেকে কমে ১৫, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা থেকে কমে ৬০, পটোল ৩৫ টাকা থেকে কমে ১৭, বরবটি ৩০ টাকা থেকে কমে ১৬, গাজর ৭০ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম কমেছে পালংশাক, ধনেপাতা, মিষ্টিকুমড়া ও টমেটোর।

তবে হাটে এখনো আগাম জাতের আলুর সরবরাহ নেই। ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা জানান, অন্যবার এ সময় হাটে প্রতিদিন গড়ে ৫০ ট্রাক আগাম আলুর আমদানি হতো। এবার পুরোনো আলুতেই ভরসা। দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকার ওপরে।

নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, ‘বিয়ানবেলা খ্যাতত থ্যাকে ১০ মণ ফুলকপি তুলে হাটত ব্যাচপার আচনো। গত সপ্তাহে মণত দাম পাচনু পনেরো শ টেকা। আজ বেচনু পাঁচ শ টেকা। দাম ম্যালা কম। খেতের বেমাক কপি ব্যাচেও খরচ উটপি না।’

মহাস্থানহাটে খেতে থেকে ১২ মণ মুলা তুলে বিক্রির জন্য এসেছিলেন রায়মাঝিড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘খ্যাতত থ্যাকে মুলা তোলা, ধোয়া, হাটত আনা পর্যন্ত এক মণ মুলা চাষ করবার যায়্যা খরচ গুনিচ্চি ৪০০ টেকা। মুলা ব্যাচনো ১২০ টেকা মণ দরে। মণত ৩৮০ টেকা লোকসান। মুলা আবাদ করবার য্যায়া সর্বস্বান্ত হচ্চি।’

মহাস্থানহাটের সবজির আড়ত লিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে হাটে প্রতিদিন গড়ে ২০ ট্রাক সবজি এসেছে। এখন প্রতিদিন ৬০ ট্রাক সবজি বেচাবিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম অনেক পড়ে গেছে। নতুন আলু আসতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। তখন প্রতিদিন গড়ে ১০০ ট্রাক সবজির আমদানি হবে। তখন সবজির দাম আরও পড়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত সবজির পরিমাণ ৩ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এর বাইরে আরও ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, এবার বৃষ্টির কারণে সবজি ও আলু চাষে দেরি হয়েছে। এ জন্য সবজির বাজার বেশ কিছুদিন ধরে চড়া ছিল। বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি বিরাজ করছে।