সব হাওরে দ্রুত বাঁধের কাজ শুরু ও প্রকল্পের তালিকা প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন

সুনামগঞ্জে সব হাওরে দ্রুত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু এবং প্রকল্পের তালিকা সরকারি ওয়েব পোর্টালে প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর সদস্যরা
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে সব হাওরে দ্রুত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু এবং প্রকল্পের তালিকা সরকারি ওয়েব পোর্টালে প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের উদ্যোগে আজ শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন অংশ নেন। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস হতে চলেছে। কিন্তু এখনো হাওরে ২০ ভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। আড়াই মাসেও প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ শেষ হয়নি। কাজ চলছে ঢিমেতালে। তাই নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এবারও বিভিন্ন হাওরে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের সংখ্যাও বাড়ছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি সব পিআইসির তালিকা সরকারি ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করতে হবে।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক সুখেন্দু সেন, যুগ্ম আহ্বায়ক দুলাল মিয়া, সদস্যসচিব মো. রাজু আহমেদ, সদস্য আরতি তালুকদার প্রমুখ।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এবার সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৬৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হবে। এ জন্য ৮২০টি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটিতে এ পর্যন্ত ২১২টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। পাউবো হিসাব অনুয়ায়ী, জেলার হাওর এলাকায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে গত বছর জেলার ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় ৬৩৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়। এ জন্য ৭৪৫টি প্রকল্পে ৭৪৫টি পিআইসি কাজ করে। এতে ব্যয় হয় ১০২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এবার প্রকল্প সংখ্যা বেড়েছে।

বাঁধের কাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শুরু হবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। কাজের জন্য স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়। পাঁচ থেকে সাত সদস্যের প্রতিটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারবে।

সুনামগঞ্জে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং হাওর বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন জেলা কমিটির সদস্যসচিব মো. সবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা যথাসময়ে এবার বাঁধের কাজ শুরু করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব প্রকল্পে কাজ শুরু হবে। উপজেলা পর্যায়ে থেকে সব পিআসির তালিকা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সব প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর সেগুলো ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হবে।’

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত মৌসুমে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ নয় হাজার ৮০ মেট্রিক টন। এবার জেলায় ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকেরা এখন বোরো আবাদ করছেন।