পালং ও লাল শাকে শহীদ মিনার

স্তম্ভগুলো দৃশ্যমান করা হয়েছে পালংশাক রোপণ করে। গোলকটি দৃশ্যমান লালশাকে। বেদির চারপাশে ভাষা দিবসের পঙক্তি রচিত হয়েছে—তাও সবজি চাষ করেই। ব্যতিক্রমী এই শহীদ মিনার দৃশ্যমান হয়েছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের জাফরাবাদ গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

স্তম্ভগুলো দৃশ্যমান করা হয়েছে পালংশাক রোপণ করে। আর গোলকটি দৃশ্যমান হয়েছে লালশাকে। বেদির চারপাশে ভাষা দিবসের পঙক্তি রচিত হয়েছে—তাও সবজি চাষ করেই। সবজি রোপণে মাটির বুকে ব্যতিক্রমী ভাবনার একটি শহীদ মিনার দৃশ্যমান হয়েছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামে। লালশাক ও পালংশাক রোপণে করা সবজির এই শহীদ মিনারটির নির্মাতা গ্রামটির কৃষিপ্রেমী রোমান আলী শাহ।

ব্যতিক্রমী ভাবনার এই শহীদ মিনারটি ঘিরে দিন দিন গ্রামসহ চারপাশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিন অনেকে এসে সবজির এই শহীদ মিনারটি দেখে বিস্মিত হচ্ছেন, ছবি তুলছেন।

কেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় সবজির শহীদ মিনার দৃশ্যমান করা হলো, তা জানতে আজ রোববার দুপুরে রোমান আলী শাহের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিষয়টি চেতনার। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বের। তিনি জানান, তাঁর এক ছোট নাতি রয়েছে। নাতি অনেক কিছু জানলেও ভাষা দিবস সম্পর্কে জানে না। তখন তাঁর মনে হলো ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় ভাষার দিবসের প্রতীক শহীদ মিনারকে উপস্থাপন করা গেলে তরুণ প্রজন্ম গ্রহণ করবে। তখন ধীরে ধীরে ভাষার প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে। সেই কারণে এই ভাবনা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোমান আলী চার বছর প্রবাসে ছিলেন। প্রবাসজীবন তিনি অসফল ছিলেন না। আয়–রোজগারের কমতি না থাকলেও মনটা টিকেনি। শেষে ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে গ্রামে ফিরে আসেন। পৈতৃক কৃষি রয়েছে তাঁর। তখন মনে হলো জীবনের বাকি সময়টা কৃষির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলবেন এবং জীবনের বাকিটা সময় কৃষির সঙ্গেই থাকবেন। সে কারণে তিনি গ্রামে এক একর ১৪ শতাংশ জায়গা নিয়ে একটি কৃষি ক্লাব গড়ে তোলেন। ওই ক্লাবের আওতায় ১১টি প্রকল্প হাতে নেন। এর মধ্যে পেয়ারাবাগান, গরু, ছাগল, কবুতর, মাছ, এবং মাটি ছাড়া ঘাষ চাষ উল্লেখযোগ্য। ন্যায্যমূল্যে কৃষককের কাছে সার–বীজ বিক্রিও এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এর আগেও তিনি সবজি দিয়ে মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তৈরি করেন। কাজটি সফলভাবে করতে পারায় পরে ওই স্থানেই শহীদ মিনার তৈরি করা হয়।

শহীদ মিনার তৈরি করতে ৬ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করতে হয়েছে। মাটির পরিচর্যা শেষে চলতি মাসের ৩ তারিখে বীজ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে সবজির শহীদ মিনার দৃশ্যমান হয়। শুধু শহীদ মিনার নির্মাণ করেই রোমান আলী দায়িত্ব শেষ করেননি। বেদিতে তিনি লিখেছেন ভাষা দিবস নিয়ে নানা পঙক্তি। এর মধ্যে একটি হলো ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ–মরি বাংলা ভাষা।’ আজ ভাষা দিবস উপলক্ষে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আগন্তুক ছিল বেশি। ছবিও উঠেছে বেশি।

রোমান আলী শাহ বলেন, ‘কৃষি এবং দেশপ্রেম একে অপরের পরিপূরক। সুতরাং আমার এমন ভাবনা চলমান থাকবে।’ জানালেন, স্বাধীনতা দিবসেও মাটি আর কৃষি ব্যবহার করে নতুন কিছু করার চিন্তা রয়েছে তাঁর।