সবার একটাই আশা, নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে: বিএনপি প্রার্থী

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও পৌরসভার সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থী।
মীর মহিউদ্দিন

প্রশ্ন :

সব মিলে নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন?

মীর মহিউদ্দিন: ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, কথা বলেছি। প্রত্যেকেই পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ভোটারদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে পৌর এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রত্যেকেই বলছেন, ‘বাবা, তোমাকে একটা ভোট দেব।’ সবার একটাই আশা, একটাই প্রত্যাশা, নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। এ জন্য নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুলিশ এবং এই কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আবেদন থাকবে, তাঁরা যেন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন। তাহলে আমার প্রস্তুতি সার্থক হবে এবং নির্বাচনে জয়যুক্ত হব।

প্রশ্ন :

আপনার নির্বাচনের ইশতেহার কী?

মীর মহিউদ্দিন: আমি ইশতেহার দিয়েছি, আলমডাঙ্গাকে একটি মডেল পৌরসভায় পরিণত করব। এখানে আধুনিক মিলনায়তন, পিকনিক ও বিনোদন পার্ক, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ড্রেনেজ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট নির্মাণ করব। সেই সঙ্গে নতুন পৌর ভবন তৈরি ও পুরোনো ভবনকে কমিউনিটি হাসপাতালে উন্নীত করতে চাই।

প্রশ্ন :

নির্বাচনের পরিবেশ কেমন মনে হচ্ছে?

মীর মহিউদ্দিন: গত ১ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল। ১ তারিখে সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেল মহড়া এবং ধানের শীষ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে পরবর্তী সময়ে বড় কিছু ঘটেনি। প্রশাসন তৎপর থাকলে অপশক্তি ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে পারবে না।

প্রশ্ন :

কারা এসব করছে?

মীর মহিউদ্দিন: আমার প্রতিপক্ষ নৌকার লোকজন এসব করছে। আমি সেসব (হামলাকারীদের) ভাইদের বলি, গণতন্ত্রের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে ও দলের স্বার্থে ভালো কিছু করেন, যাতে ভোটটি নিরপেক্ষ হয়। সবাই মিলেমিশে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারি, সেটাই সবার প্রতি কামনা।

প্রশ্ন :

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগ, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানের শীষ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় আপনার লোকজন মোবাইল ফোন প্রতীকের কার্যালয়ে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। আসলে কী ঘটেছিল?

মীর মহিউদ্দিন: অভিযোগ সঠিক নয়। এ পর্যন্ত একটা নির্বাচনী মিছিল হয়েছে এবং নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিলটি হয়েছে। ওই মিছিলকারীরাই প্রথমে ধানের শীষ এবং পরবর্তী সময়ে মোবাইল ফোন প্রতীকের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে।

প্রশ্ন :

ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী?

মীর মহিউদ্দিন: এখনো আমাদের দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী অশিক্ষিত। শতভাগ শিক্ষিত মানুষের জন্য ইভিএম পদ্ধতি উপযুক্ত। আমার দেশের জন্য একবারে চাপিয়ে দেওয়া সঠিক হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে দুটি করে সেন্টারে ইভিএমে এবং বাকিটা ব্যালটে করা ভালো হতো। আস্তে আস্তে মানুষকে শেখালে ভালো হতো। তাই ইভিএম নিয়ে মানুষের অনেক হতাশা। যাঁরা ইভিএম বোঝেন না, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা সহযোগিতার নামে আসলে যে কী করে, কী করবে, তা নিয়ে মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তারপরও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন মানুষের ভোটের আমানতটা রক্ষা করেন।

প্রশ্ন :

ভোটারদের ইভিএম বিষয়ে ধারণা দিতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?

মীর মহিউদ্দিন: আমার কর্মীরা ইভিএম মেশিনের আদলে প্রচারপত্র তৈরি করে ভোটারদের ধারণা দিচ্ছেন। বোঝানো হচ্ছে কীভাবে ভোট দিতে হবে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভোটারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি।

প্রশ্ন :

আগের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে কী?

মীর মহিউদ্দিন: মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, মানুষ এখন ভীত–সন্ত্রস্ত। ভোটারদের আশঙ্কা, ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও জিতবে না। এমনটা অতীতে ছিল না, প্রথম দেখছি। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, ‘ভোট দেওয়া যাবে তো, ভোট দিতে পারব তো, ভোট দিলে তুমি জিতবা তো?’

প্রশ্ন :

জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?

মীর মহিউদ্দিন: নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমি দুজনকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছি।

প্রশ্ন :

প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

মীর মহিউদ্দিন: প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি পূর্ণাঙ্গ ফলো (অনুসরণ) করে এবং তার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও পুরো শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলসহ তৎপরতা জোরদার করা দরকার। এ জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন, সেটাই প্রত্যাশা।

প্রথম আলো: সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মীর মহিউদ্দিন: প্রথম আলোর জন্য শুভ কামনা।