সবুজে মোড়ানো বিদ্যালয়

শ্রীপুরের হাজী আবদুল কাদের প্রধান উচ্চবিদ্যালয়টির ছাদ ও আশপাশ কয়েক শ ঔষধি, ফলদ ও বনজ গাছ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে
প্রথম আলো

ঘন সবুজে ঘেরা নিভৃত গ্রাম হায়াতখার চালা। গাজীপুরের শ্রীপুরের এই গ্রামের একটি উঁচু টিলার মতো স্থানে বিশাল মাঠ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে হাজী আবদুল কাদের প্রধান উচ্চবিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টিকে এখন মানুষ জানে গ্রিন ক্যাম্পাস স্কুল হিসেবে। এর ছাদ ও আশপাশ কয়েক শত ঔষধি, ফলদ ও বনজ গাছ দিয়ে অনন্য রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

শ্রীপুর সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গেলেই বিদ্যালয়টির দেখা মেলে। একেবারে নিভৃত পল্লী। এমন পরিবেশে গতকাল শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়টির সামনে গেলে চোখে পড়ে বিশাল একটি বকুলগাছ। আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে নানা রকম ছায়াদানকারী গাছ। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন। তাঁর উদ্যোগেই বিদ্যালয়ের ছাদ ও এর আঙিনায় ৯০ প্রজাতির গাছপালা রোপণ করা হয়েছে। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি খন্দকার মো. ওবায়েদ উল্লাহ্‌।

প্রধান শিক্ষক নাসির তাঁর বিদ্যালয়ের ছাদ দেখাতে নিয়ে যান এই প্রতিবেদককে। কী নেই সেখানে! আছে আম, জাম, আপেল, আঙুর, মাল্টা, লেবু, কমলা ও জাম্বুরা, ঘৃতকুমারী, তুলসী, পুদিনাপাতা, পাথরকুচি, কোরিয়ান জিনসেং, সাদা লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধা, ননিফল, লেটুসপাতা, ব্রকলি, চেরি টমেটো, জুকিনি, পার্সিমন, করসোল, অ্যাভোকাডো, প্যাশন ফ্রুট, পেপিনো মেলন, স্ট্রবেরি, পেয়ারাসহ বিভিন্ন গাছ। ছাদে বিশেষভাবে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে চারা উৎপাদন করা হয়। বিশাল ছাদজুড়ে শুধু গাছ আর গাছ। মার্চের শুরুতে ছাদে ঝুলছে আম।

নাসির উদ্দিন তাঁর এই সবুজ ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছেন গত বছরের ১৭ মার্চ। তিনি এর নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু গ্রিন ক্যাম্পাস। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গাছের সঙ্গে পরিচিত করা ও তাঁদের বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করাই হচ্ছে এই কাজের প্রধান উদ্দেশ্য। যেসব ফল তাঁরা খান কিন্তু সেটির গাছ কখনো দেখেননি, এমন অনেক ফলের গাছ আছে বিদ্যালয়ের ছাদে। ছাদবাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শারীরিক শ্রম দিচ্ছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক–কর্মচারীরা। বৈশ্বিক করোনা মহামারির প্রভাবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে তিনি তাঁর শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি সবুজে সাজিয়েছেন।

নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও আশপাশের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই গ্রিন ক্যাম্পাসে এসে গাছের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। তারা শিখছে, কীভাবে গাছ লাগাতে হয়, কীভাবে সার প্রয়োগ করতে হয়, অর্গানিক পদ্ধতিতে কীভাবে সবজি উৎপাদন করা যায়। গ্রিন ক্যাম্পাস তৈরি করার জন্য বিদ্যালয় থেকে ফান্ডিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য এই সবুজ ক্যাম্পাসে আরও অনেক গাছ আনার পরিকল্পনা আছে।

গতকাল বিদ্যালয়টিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গাজীপুর সদর এলাকার কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামের একটি কারখানার পক্ষ থেকে প্লাস্টিক ড্রাম দেওয়া হয়েছে। কারখানার পক্ষ থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এগুলো হস্তান্তর করেছেন কারখানার পরিবেশ বিভাগের প্রধান সাঈদ চৌধুরী ও মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক শাকিল পারভেজ।

সবুজ এই ক্যাম্পাস দেখতে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন আসছেন। বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে গেছেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছেন।