সবুজের সমারোহের মধ্যে বেগুনি রঙের ধানখেত

কৃষক নূর ই আলম সিদ্দিকীর বেগুনি রঙের ধানখেত। শুক্রবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

চারদিকে ধানখেত। সবুজ রঙের ছড়াছড়ি। তার মাঝে বেগুনি রঙের সমাহার। এটাও ধানখেত। ব্যতিক্রম এ ধানখেত কৌতূহল জাগায় মনে।

নতুন জাতের এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। বেগুনি রঙের এ ধানের আবাদ করেছেন নূর ই আলম সিদ্দিকী। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল গ্রামের কৃষক। চলতি বোরো মৌসুমে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো এ ধানের আবাদ করেছেন তিনি।

নূর ই আলম সিদ্দিকী ধানশাইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পেশায় শিক্ষক হলেও নিত্যনতুন জাতের ধান আবাদ নিয়ে তাঁর আগ্রহ রয়েছে। অনলাইনে ভিডিও প্রকাশের মাধ্যম ইউটিউব থেকে তিনি পার্পল লিফ রাইস এবং এ জাতের ধানের আবাদ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। পরে অনেক চেষ্টা করে স্থানীয় এক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষকের কাছ থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। বীজতলা তৈরি করে চলতি বোরো মৌসুমে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে তা রোপণ করেছেন তিনি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে দেশে প্রথম বেগুনি রঙের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধানের নাম পার্পল লিফ রাইস। এ ধানের গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। এর চালের রংও বেগুনি। তাই এটি রঙিন ধান হিসেবে পরিচিত।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ধানশাইল গ্রামের মাঠে সবুজ ধানখেতের সমারোহ। সবগুলো খেতই চতুর্ভুজ আকৃতির। তার মাঝখানে নূর ই আলমের ধানখেত। বেগুনি রঙের এ ধানখেত বৃত্তাকার। সব মিলিয়ে অনেকটা জাতীয় পতাকার মতো। পার্থক্য শুধু লালের জায়গায় বেগুনি বৃত্ত।

খেতের পরিচর্যা করছিলেন নূর ই আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে পার্পল লিফ রাইস বা বেগুনি রঙের ধানের আবাদ করেছেন। এ ছাড়া ২০ শতাংশ জমিতে ব্রি-৫০ জাতের বাংলামতি, ১৫ শতাংশ জমিতে কাটারিভোগ ও ৬ শতাংশ জমিতে ফাতেমা নামের ধান আবাদ করেছেন তিনি। বেগুনি রঙের ধানের ফলন কী পরিমাণ হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। নতুন এই ধানখেত দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ। অনেক কৃষক এ ধান চাষ করতে বীজ চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার দাঁড়িয়ারপাড় গ্রামের কৃষক তারেক হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ধান চাষ করছেন। কিন্তু এবারই প্রথম বেগুনি রঙের ধানের আবাদ দেখলেন। নূর ই আলম এমন সুন্দরভাবে বীজতলা রোপণ করেছেন, দেখে মনে হয়, খেতটি যেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। তিনি এ ধান আবাদ করে এলাকার মানুষের মধ্যে চমক সৃষ্টি করেছেন।

ঝিনাইগাতীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, বেগুনি রঙের ধানের আবাদ উপজেলায় এটিই প্রথম। এ ধানের চালের পুষ্টিমান বেশি, ভাতও সুস্বাদু। এ চাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধানের আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।