সমঝোতার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা নিল পুলিশ

রাজশাহীর বাগমারায় এক নবদম্পতির মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য থানায় ডেকে ধর্ষণ মামলা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ওই মামলার প্রধান আসামি কলেজছাত্র আরমান হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

পুলিশের এই রহস্যজনক ভূমিকার প্রতিবাদে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কাল বুধবার প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করা হবে। সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুজরুককৌড় গ্রামের আনিসুর রহমানের কলেজপড়ুয়া ছেলে আরমান হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার একজন প্রবাসীর স্কুলপড়ুয়া মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক থেকে ছয় মাস আগে বিয়ে হয়। এরপর গত অক্টোবর মাসে আড়ম্বরপূর্ণ বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তবে সপ্তাহখানেক আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয়ের পর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটিকে (স্ত্রী) বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

এই বিষয়ে কনের পক্ষে বাগমারা থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকেলে সমঝোতার কথা বলে পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায় ডাকে। সে মোতাবেক নবদম্পতিসহ তাঁদের অভিভাবকেরা থানায় আসেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম সমঝোতা বৈঠক থেকে আরমান হোসেনকে তুলে নিয়ে থানাহাজতে আটকে রাখেন। রাতে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে আজ দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয়ের পর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটিকে (স্ত্রী) বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

আরমান হোসেনের বাবা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ থানায় সমঝোতার কথা বলে ডেকে ধর্ষণ মামলা নিয়ে তাঁর ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের বিয়ে হয়েছে এবং বউভাতের বড় আয়োজনের মাধ্যমে ছেলের বউকে ঘরে তুলে নেওয়া হয়েছে। এ–সংক্রান্ত প্রমাণাদিও তিনি দেখান। এরপর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা গ্রহণ ও গ্রেপ্তার করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পুলিশ থানায় সমঝোতার কথা বলে ডেকে ধর্ষণ মামলা নিয়ে ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। অথচ বউভাতের বড় আয়োজনের মাধ্যমে ছেলের বউকে ঘরে তুলে নেওয়া হয়েছে।
আনিসুর রহমান, আরমান হোসেনের বাবা

ওই বিয়ের কালেমা পড়ানো মৌলভি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি উভয় পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ের কালেমা পড়িয়েছেন।

ওই বিয়ের বরযাত্রী বাগমারা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলতাফ হোসেন মণ্ডল বলেন, তিনি তাঁদের বিয়ের বরযাত্রী ছিলেন। উভয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই একসঙ্গে থাকতেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি। গতকাল থানায় আয়োজিত সমঝোতা বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। আজ দুপুরে তিনি ধর্ষণ মামলার বিষয়টি জেনেছেন।

প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণাকারী এলাকার প্রায় অর্ধশত বাসিন্দা বলেন, বিয়ের পর তিন মাস ধরে তাঁরা একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন। বরপক্ষ বউভাতেরও আয়োজন করেছে। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিয়ে হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। আরমানকে থানায় ডেকে মামলা নিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আসামি আরমান হোসেনকে এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছেন।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ বিকেল থেকে ছাত্রীর মায়ের মুঠোফোনে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে ফোনটি বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি। ওই ছাত্রীর ফুফাও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা যায়নি।