সমতলে কমলা চাষে লাখপতি

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে দুটি বাগানে প্রায় এক যুগ ধরে কমলার চাষ করছেন বীরহলী গ্রামের জুয়েল জাহিদ। কমলার চারা ভুটান ও দার্জিলিংয়ের।

জুয়েল জাহিদের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা কমলা। গত মঙ্গলবার উত্তর মালঞ্চা গ্রামে
প্রথম আলো

বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা কমলা। বিভিন্ন আকারের রসাল কমলার ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো বাঁশের ‘ঠেকা’ দিয়ে উঁচু করে রাখা হয়েছে। বাগানের কমলাগাছের এমন দৃশ্য হাসি ফুটিয়েছে চাষি জুয়েল জাহিদের (৫৫) মুখে।

জুয়েলের এই বাগান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মালঞ্চা গ্রামে। গ্রামের সমতল ভূমির এই কমলাবাগানে এখন ফল পাকার মৌসুম। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই পাকা কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। জুয়েলের দাবি, বাগান থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার পাকা কমলা।

উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের বীরহলী গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল জাহিদ। বীরহলী গ্রামে এক বিঘায় ৮০-৯০টি আর উত্তর মালঞ্চা গ্রামে তিন বিঘা আয়তনের বাগানে ২৫০টি কমলাগাছ আছে। জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পাহাড়ি এলাকায় কমলার বাগান আছে। এ ছাড়া বাজারে ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং থেকে আমদানি করা কমলার প্রাধান্য। বিদেশের কমলাবাগানের ছবি, ভিডিও দেখেছেন। এখন তিনি নিজেই কমলাবাগানের মালিক। আশপাশের অনেকে এখন তাঁর বাগান দেখতে আসেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি বেলে দো-আঁশ ও অম্লীয়। এই মাটি কমলা, মাল্টা ও লেবু-জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
আবু হোসেন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

বীরহলী গ্রামের বাগানটিতে কমলা চাষ শুরুর আগে দীর্ঘদিন ধরে আমের চাষ হতো। ফলে তিনি যখন সেখানে কমলার বাগান করেন, শুরুতে ফলন কম হয়। এ মৌসুমে সে বাগানে ১৫-১৬ মণ ফল আসে, যা গত বছরের অক্টোবরে কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করে দেন। প্রতিমণ কাঁচা কমলা বিক্রি করেন তিন হাজার টাকায়। আর উত্তর মালঞ্চা গ্রামের বাগানটি নিজে শ্রমিক খাটিয়ে প্রস্তুত করেছেন। সেখানে গত ৯-১০ বছর কমলার চাষ করছেন।

জুয়েল বলেন, উত্তর মালঞ্চা গ্রামের বাগানে এ মৌসুম মিলিয়ে সপ্তমবারের মতো কমলা ধরল। এই কমলাগুলো দার্জিলিং জাতের।

২০১০ সালে ঠাকুরগাঁও হর্টিকালচার সেন্টারে ‘মানসম্মত বাগান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় দার্জিলিং ও ভুটানের কমলার চারা বিপণন ও উৎপাদনের প্রশিক্ষণ চলছিল। জুয়েল তখন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএডিসি) পীরগঞ্জ কার্যালয়ের দুই পরিদর্শকের পরামর্শেই কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হন।

জুয়েল বলেন, ওই বছরের মার্চে তিনি সেখান থেকে তিন বছর বয়সী তিন শ দার্জিলিং ও ভুটান জাতের কমলার চারা কেনেন। পরে সেগুলো দুটি বাগানে রোপণ করেন। ২০১৪ সালে দুই বাগানের কিছু কিছু গাছে কমলা ধরতে শুরু করে।

হিসাব-নিকাশের খাতা দেখে জুয়েল জানান, ২০১৪ সালে ৪৯ মণ কমলা বাগানেই বিক্রি করেন। পরের বছরগুলোতে উৎপাদন আরও বাড়ে। ২০২০ সালে উত্তর মালঞ্চা গ্রামের বাগানের ১৪৪ মণ পাকা কমলা বিক্রি করেন।

জুয়েল জাহিদ দাবি করেন, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি উত্তর মালঞ্চা বাগানেই প্রায় ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। আরও পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। মোট ২০০ মণের বেশি ফলন পাওয়ার আশা তাঁর।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে পীরগঞ্জের উত্তর মালঞ্চা ও বীরহলীর কমলাবাগান দুটিই একমাত্র কমলার বাগান। এ ছাড়া অনেক বাড়িতে দুই-তিনটি করে গাছে কমলার চাষ হচ্ছে।

আবু হোসেন আরও বলেন, পীরগঞ্জসহ ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি বেলে দো-আঁশ ও অম্লীয়। এই মাটি কমলা, মাল্টা ও লেবু-জাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই এসব ফল চাষে কৃষকদের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাঁচ উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে ছোট ছোট বাগান তৈরি করা হয়েছে। এতে দুই-তিন বছরের মাথায় কমলা ধরবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ রায় জানান, কমলার আবাদ বৃদ্ধির জন্য গত বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে ২৫টি বাগান করে দেওয়া হয়েছে। এসব বাগানে তিন-চার বছরে মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।