সমস্যা সমাধান না করে উল্টো কর্তৃপক্ষের মানববন্ধন

জলাবদ্ধতা পুঁজি করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা পৌর কর্তৃপক্ষের মানববন্ধন। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের শহীদ নাজমুল সরণির মিনি মার্কেটের সামনে
প্রথম আলো

সাতক্ষীরা পৌরসভায় জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে গত সোমবার নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ মাদুর ও বালিশ নিয়ে মানববন্ধনসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নিয়ে আজ বুধবার উল্টো নাগরিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জলাবদ্ধতার নামে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ এসব আন্দোলন করছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নানা দাবিতে গত সোমবার নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের উদ্যোগে মাদুর ও বালিশ নিয়ে পৌরসভা চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও মানববন্ধন করা হয়। এসব সমস্যার সমাধান না করে পাল্টা মানববন্ধন করল পৌর কর্তৃপক্ষ।

জেলা শহরের শহীদ নাজমুল সরণির মিনি মার্কেটের সামনে আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওই মানববন্ধন করা হয়। এতে পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল আলম। বক্তব্য দেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ আবদুস সেলিম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী ফিরোজ হাসান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ শফিক উদ দৌলা প্রমুখ।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, অতিবর্ষণে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার জলাবদ্ধতাকে পুঁজি করে কথিত নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নামে কতিপয় ব্যক্তি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলাচ্ছেন। পৌরসভার প্রচেষ্টাকে হেয়প্রতিপন্ন, জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নামে কটূক্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনগণকে মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নাশকতা করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে। এসব মেনে নেওয়া হবে না।

আমরা সাতক্ষীরার সমস্যা-সংকট নিয়ে কথা বলি, কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়। যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁরা দুটি বিষয়কে এক করে ফেলছেন। তাঁদের অবস্থান ঠিক নয়।
ফাহিমুল হক, সভাপতি, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি পল্টু বাসার বলেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের যৌক্তিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে পৌর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের মানববন্ধন করা শোভন নয়। দায়িত্বশীল পদে থেকে মেয়র কিংবা কাউন্সিলররা যাচ্ছেতাই বলতে বা করতে পারেন না। কোনো বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকলে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বসে সুরাহা করতে পারতেন অথবা লিখিত বিবৃতি দিতে পারতেন। কিন্তু পৌরবাসী সমস্যা সমাধান না করে উল্টো পথে হাঁটছে। এটা দুঃখজনক, কারও জন্য শুভ নয়।

পৌরসভার বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, সাতক্ষীরার বদ্দিপুর কলোনি, মাঠপাড়া, কামালনগর, ইটেগাছা, মধুমল্লারডেঙ্গীসহ নয়টি ওয়ার্ডের সব কটিতে কমবেশি জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকার মানুষের ঘরে মাসের পর মাস পানি। জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে এলাকায় এলাকায় আন্দোলন চলছে। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চসহ অন্যান্য নাগরিক কমিটি জলাবদ্ধতাসহ রাস্তাঘাট, নর্দমা, প্রাণসায়ের খাল সচল করাসহ নানা দাবিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাসাধিককাল ধরে সভা-সমাবেশ করছে।

এর অংশ হিসেবে গত সোমবার নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের উদ্যোগে মাদুর ও বালিশ নিয়ে পৌরসভা চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও মানববন্ধন করা হয়। এসব সমস্যার সমাধান না করে পাল্টা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে পৌর কর্তৃপক্ষ বিষোদ্‌গার ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

সাতক্ষীরা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে নাগরিক সেবার মান অত্যন্ত নিচু।
ইব্রাহিম হোসেন, বাসিন্দা, মুনজিতপুর, সাতক্ষীরা পৌরসভা

সাতক্ষীরা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানে নাগরিক সেবার মান অত্যন্ত নিচু বলে মন্তব্য করেন মুনজিতপুর এলাকার ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভায় কোনো পরিকল্পিত নর্দমাব্যবস্থা নেই, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই, নেই সুপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানে নাগরিকদের বসবাস করতে হচ্ছে। নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে উদাসীন মেয়র ও কাউন্সিলররা ব্যর্থতা ঢাকতে উল্টো নাগরিক নেতাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন।

জানতে চাইলে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি ফাহিমুল হক বলেন, ‘আমরা সাতক্ষীরার সমস্যা-সংকট নিয়ে কথা বলি, কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়। যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁরা দুটি বিষয়কে এক করে ফেলছেন। তাঁদের অবস্থান ঠিক নয়।’