সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় টেকনাফ থেকে ৩০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় টেকনাফ উপকূল থেকে ৩০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল থেকে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ৩০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। উদ্ধার রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। দালালের খপ্পরে পড়ে রোহিঙ্গারা নৌকায় করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন।

উদ্ধার রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাঁচটি শিশু, পাঁচজন পুরুষ ও ২০ জন নারী। এর মধ্যে ১৭ জন তরুণী। বেলা একটার দিকে উদ্ধার ৩০ রোহিঙ্গাকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডিল এলাকায় কোস্টগার্ডের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে দালালেরা (মানব পাচারকারী) মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি ও তরুণীদের উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সমুদ্র উপকূলে জড়ো করে। তারপর মাছ ধরার ছোট ছোট নৌকায় তুলে সমুদ্রের মাঝপথে মাঝারি আকৃতির মাছ ধরার ট্রলারে তুলে দেয়। এই ট্রলার দিয়ে ৩০ রোহিঙ্গাকে গভীর সাগরে অপেক্ষমাণ আরেকটি বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি জলদস্যুদের কবলে পড়ায় জাহাজে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে ভাসছিল। খবর পেয়ে কোস্টগার্ড রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে টেকনাফ নিয়ে আসে।

এক রোহিঙ্গা নারী স্থানীয় পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যদের বলেছেন, মালয়েশিয়ায় থাকা এক তরুণের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর বিয়ে হয়েছে এক মাস আগে। ট্রলারে উঠে সমুদ্রপথে তিনি ওই তরুণের (স্বামী) কাছে যাচ্ছিলেন। মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দালালের হাতে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু জলদস্যুদের খপ্পরে পড়ে তাঁকে পুনরায় টেকনাফ ফিরে আসতে হয়েছে। কথিত স্বামীর সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়নি।

উদ্ধার আরেক রোহিঙ্গা মোস্তফা বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের কয়েকজন মানব পাচারকারী দালাল ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের টেকনাফের সমুদ্র উপকূলে নিয়ে যায়। এরপর ছোট ছোট নৌকায় সাত থেকে আটজন বোঝাই করে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে একটি মাছ ধরার ইঞ্জিন নৌকায় তুলে দেয়। নারী, পুরুষ, শিশুসহ ৩০ জন রোহিঙ্গা বোঝাই করে মাছ ধরার ট্রলারটি গভীরে সাগরের দিকে যাচ্ছিল। সেখানে অপেক্ষমাণ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে থাইল্যান্ড থেকে আসা একটি বড় জাহাজ। তাঁদের সেই জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলারটি জলদস্যুদের খপ্পরে পড়ে। দস্যুরা রোহিঙ্গাদের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে ইঞ্জিন বিকল করে ট্রলারটি সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ট্রলার নিয়ে রোহিঙ্গারা সাগরে ভাসছিল কয়েক দিন। আজ সকাল আটটার দিকে কোস্টগার্ড ভাসমান ট্রলার থেকে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে টেকনাফ উপকূলে নিয়ে আসে।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, বঙ্গোপসাগর এখন শান্ত রয়েছে। করোনাকাল উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার ট্রলারও তেমন নেই। এ সুযোগে মানব পাচারকারী দালালচক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। দালালেরা উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা তরুণীদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বিদেশে পাচার করছে।