সমুদ্রের পাড়ে শূন্যে ভেসে রসনাবিলাস

পাতে থাকা মুখরোচক খাবারের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি সুযোগ মিলবে সূর্যাস্ত দেখারছবি: প্রথম আলো

পার্ক কিংবা বিনোদনকেন্দ্র, সাগর, নদী কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি রেস্তোরাঁয় বসে রকমারি খাবার খেয়ে তৃপ্ত হওয়ার সুযোগ কমবেশি অনেকের আছে। কিন্তু এবার ভাসমান বা উড়ন্ত রেস্তোরাঁয় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে খাবার খাওয়ার সুযোগ মিলবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।

খাবার খেতে খেতে চোখে পড়বে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের বিচরণ, নীলাভ জলরাশি, দূরের পাহাড় ও রাতের আলোকোজ্জ্বল শহর। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল সি-প্রিন্সের পাশের খোলা মাঠে দেশের প্রথম এই উড়ন্ত রেস্তোরাঁর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্লাই ডাইনিং’।

৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় এর উদ্বোধন করেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। ‘ফ্লাই ডাইনিং’ নির্মাণ করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইওর ট্রাভেলস লিমিটেড। এর কর্ণধার নবাব ফয়েজ আবু বক্কর খান।

ফ্লাই ডাইনিং-রেস্তোরাঁর পশ্চিম পাশের খালি স্থানে বসানো আছে একটি ক্রেন। একটি বিশেষ পাটাতনে ২৪ জন ধারণক্ষমতার চেয়ার, টেবিল সাজানো। এর ওপর ছাতার আদলে ছাদ দিয়ে চারপাশ খোলা রাখা হয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ তার ক্রেনের মাথায় লাগিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাটাতনের মাঝখান ও চারপাশ। ক্রেনের মাধ্যমে রশি টেনে পাটাতন ওপরে-নিচে ওঠানামা করানো হয়। মাটিতে থাকা রান্নাঘরে পছন্দমতো খাবার অর্ডার করে তা নিয়ে এই উড়ন্ত পাটাতনে বসে খাওয়া যাবে।

ওপরে ছাদ থাকলেও চারপাশে ফাঁকা। বসার জন্য আছে চেয়ার। সামনে থাকা টেবিলে পরিবেশ করা হয় খাবার। কক্সবাজারের ফ্লাই ডাইনিংয়ে
ছবি: প্রথম আলো

সৈকতের বালুচর থেকে ডাইনিং আকাশে ওঠে ১৬০ ফুট পর্যন্ত। খাবার রান্না ও পরিবেশন ব্যবস্থাপনায় আছে দেশের বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী টনি খানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল। গত বৃহস্পতিবার উড়ন্ত রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয় ঢাকা থেকে আসা সোহেল-সাদিকা দম্পতির। পরে সাদিকা ইয়াসমিন (২৫) বলেন, প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন। পাটাতনটি ওপরে ওঠার পর সে ভয় কেটে যায়। ওপর থেকে নিচের সমুদ্রসৈকত, দূর পাহাড়ের সারি আর আলোকোজ্জ্বল শহরের দৃশ্য দারুণ।

‘ফ্লাই ডাইনিং’-এ মাথাপিছু খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অগ্রিম বুকিং দিয়ে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, সামাজিক অনুষ্ঠানও করা যাবে এখানে। পাটাতনে ওঠা, আকাশে উড্ডয়ন, অবস্থান ও মাটিতে নেমে আসাসহ পুরো প্যাকেজের ব্যাপ্তি ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। এ রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সুযোগ মিলবে ১২-৫০ বছর বয়সীদের। তবে যাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি আছে, তাঁদের জন্য আকাশে বসে রসনাবিলাস নিষিদ্ধ।

জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এই ফ্লাই ডাইনিং নিরাপদ ও পরীক্ষিত।
ছবি: প্রথম আলো

উড়ন্ত রেস্তোরাঁয় ওঠার আগেই অতিথিদের পালস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তিনবার উড়ন্ত রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সুযোগ মেলে।

ফ্লাই ডাইনিংয়ের পরিচালক ভারতীয় নাগরিক ডিভিয়া পাঠক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হলেও এখানে বিনোদনের তেমন কোনো মাধ্যম নেই। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তাঁরা এই ‘ফ্লাই ডাইনিং’ অনেক পছন্দ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ফ্লাই ডাইনিংয়ের কর্ণধার নবাব ফয়েজ আবু বক্কর খান বলেন, এমন রেস্তোরাঁ বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে চালু আছে। জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এই ফ্লাই ডাইনিং নিরাপদ ও পরীক্ষিত। এমন ব্যতিক্রম আয়োজন পাল্টে দেবে কক্সবাজারে পর্যটনের আবহ।