সম্মেলনের দেড় বছরেও হয়নি সীতাকুণ্ড উপজেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

আওয়ামী লীগের লোগো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ দলীয় সম্মেলন হয়েছে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর। এরপর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুনের কমিটি।

পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি না থাকায় হচ্ছে না ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। দলীয় কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, করোনা মহামারি চলতে থাকায় এবং জেলা কমিটির অনুমোদন দেরিতে হওয়ায় এই দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন ধারায় বিভক্ত। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে নেতা ঠিক করতে একমত হতে পারছেন না সভাপতি ও সম্পাদক। তিনটি ধারার একটির নেতৃত্বে বর্তমান কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, আরেকটির নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুন এবং সাংসদ দিদারুল আলম আরেকটি ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দলীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করতে চান অনেকে। মনোনয়নে এগিয়ে থাকার জন্য পদের প্রয়োজন। তাই পদপ্রত্যাশীরা দলের পদ পাইয়ে দিতে তাঁদের নিজ নিজ নেতাদের ধরছেন। আর সমস্যা সমাধানে অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে তিন ধারার নেতারা যাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায়।

পদপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বে মতভেদ ও বিভাজন থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওপর। এখন দলের রাজনীতির চেয়েও নেতার পরিচয়ে চলছেন পদপ্রত্যাশীরা। দলীয় পদ ছাড়া এ ধরনের নেতার পরিচয় দিয়ে রাজনীতি করতে অনেকে অস্বস্তিতে আছেন।

এ বিষয়ে গতকাল উপজেলা কমিটির সদস্য, নতুন পদপ্রত্যাশী ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদপ্রত্যাশী অন্তত ১৫ নেতার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অস্বস্তি ও হতাশার বিষয়টি জানা যায়। নেতাদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকা মানে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়া। ফলে দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়ার অনুসারী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখন কোনো পদ–পদবি নেই। দ্রুত কমিটি হয়ে যাক, এটাই চাই। এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ আশা করছি। আশা করছি, আমাদের নেতারা তা মূল্যায়ন করবেন।’

সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আবদুস সালাম বলেন, ‘জেলা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী করোনা, লকডাউন ইত্যাদির কারণে কমিটি গঠন পিছিয়েছে। আমি চাই, দ্রুত কমিটি হয়ে যাক। আগে ১২ বছর সদস্য ছিলাম। এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সম্পাদক পদ আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, আজ যদি কমিটিতে পদ-পদবি থাকত, তাহলে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের সময় সেগুলো ব্যবহার করা যেত।

সাংসদ দিদারুল আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জালাল আহমেদ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ১০ নেতা সীতাকুণ্ড থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁরাসহ সভাপতি-সম্পাদক মিলে ১২ জন বসে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে সব পক্ষের সুন্দর একটি কমিটি গঠন করা হোক।

উপজেলা কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া এবং করোনা মহামারি ও সর্বশেষ লকডাউনের কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছি। গত তিন মাসে সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়ার সঙ্গে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। এ সপ্তাহে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে। ওই বৈঠকে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে বিভাজিত রাজনীতির কারণে সমন্বয় করে তালিকা তৈরিতে একমত হতে পারছেন না নেতারা। এর আগে আমরা তাঁদের মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁদের পাঁচ কর্মদিবস বেঁধে দিয়ে লিখিতভাবে চূড়ান্ত নোটিশ দেব। তাঁরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা উপজেলা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সাংসদকে নিয়ে জেলা কমিটির সদস্যরা কমিটি তৈরি করে দেব।’